
চুল পড়ার ঘরোয়া টোটকা হিসাবে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করার চল বহু পুরোনো। কিন্তু পেঁয়াজের রস মাথায় মাখলে কি সত্যিই নতুন চুল গজায়? নতুন চুল গজানোর সঙ্গে পেঁয়াজের রসের বৈজ্ঞানিক কোনও সম্পর্ক আদৌ কি রয়েছে?
আসুন দেখি বিজ্ঞান কি বলে
হ্যাঁ,পেঁয়াজের রস চুলের জন্য উপকারী বলে বহু গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এটি জাদুকরী কোনো সমাধান নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে কিছু নির্দিষ্ট উপাদান ও প্রক্রিয়ার কারণে চুলের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। নিচে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করা হলো:
১. সালফার (Sulfur) সমৃদ্ধ উপাদান
পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে সালফার থাকে। চুলের প্রধান প্রোটিন কেরাটিন সালফার-সমৃদ্ধ অ্যামিনো অ্যাসিড (যেমন- cysteine) দিয়ে গঠিত। তাই সালফার কেরাটিন উৎপাদনে সহায়ক হয়ে চুলকে মজবুত করে এবং ভেঙে যাওয়া রোধ করে।
২. রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি
পেঁয়াজের রস মাথার ত্বকে লাগালে হালকা জ্বালাভাব সৃষ্টি করে, যা রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায়। এতে মাথার ত্বকে রক্তপ্রবাহ বাড়ে এবং হেয়ার ফলিকলস (Hair follicles)-এ পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকারিতা
পেঁয়াজে আছে quercetin নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ কমায় এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এটি কমলে হেয়ার ফলিকলস সক্রিয় থাকে।
৪. অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য
পেঁয়াজে উপস্থিত সালফার যৌগ ও ফাইটোকেমিক্যালগুলো মাথার ত্বকের সংক্রমণ (যেমন খুশকি, ফাঙ্গাল ইনফেকশন) প্রতিরোধে সাহায্য করে। সংক্রমণমুক্ত ত্বক চুল বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
৫. বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রমাণ
২০০২ সালে Journal of Dermatology-তে প্রকাশিত একটি ছোট্ট গবেষণায় দেখা গেছে যেসব রোগীকে ২ মাস ধরে দিনে দুইবার পেঁয়াজের রস মাথার ত্বকে লাগানো হয়েছিল, তাদের প্রায় ৮৭% রোগীর চুল গজাতে শুরু করেছিল। অন্যদিকে সাধারণ পানি ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল অনেক কম। যদিও গবেষণাটি ছোট ছিল, তবে এটি প্রমাণ করে যে পেঁয়াজের রস চুল পড়া কমাতে সহায়ক হতে পারে।
ব্যবহার পদ্ধতি
তাজা পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে রস ছেঁকে নিন। তারপর মাথার ত্বকে তুলো বা আঙুল দিয়ে লাগান। ১৫–৩০ মিনিট রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ২–৩ বার নিয়মিত ব্যবহার করা যেতে পারে।
সতর্কতা
অতএব এটা প্রমানিত যে, পেঁয়াজের রসে উপস্থিত সালফার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিতভাবে চুলের গোড়া মজবুত করে, নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে এবং মাথার ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে।
মন্তব্য করুন