বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

অনেকেই বলছে ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪১ পিএম

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। জিটিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া, শেখ হাসিনাকে ভারতের আশ্রয়, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচন আয়োজনে কেন দেড় বছর সময় লাগছে, তার ব্যাখ্যা এই সাক্ষাৎকারে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সাক্ষাৎকারের অংশ বৈশাখী অনলাইন পাঠকদের জন্য প্রশ্নোত্তর আকারে হুবহু তুলে ধরা হলো।

মেহদি হাসান: আপনার অন্তর্বর্তী সরকার এখন এক বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। আপনি বলেছেন যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি আরও পরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনি এটিকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এগিয়ে এনেছেন। কিন্তু...

অধ্যাপক ইউনূস: ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। রমজানের কারণে।

মেহদি হাসান: বুঝেছি। কিন্তু আপনি এই সাক্ষাৎকারের শুরুতে যেমন বলেছেন, বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখনই পদক্ষেপ চান—আগামীকাল নয়, ছয় মাস পরেও নয়। সমালোচকেরা বলছেন, এটি অনেক দেরি। নির্বাচনের জন্য আরও ছয় মাস অপেক্ষা করাটা অনেক দীর্ঘ সময়। মানুষ অস্থির হয়ে পড়ছেন। আমরা কেন আগে নির্বাচন করতে পারছি না? নেপালে, যেখানে এই বছরে কিছুদিন আগে সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, সেখানকার অন্তর্বর্তী নেতা মাত্র ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের একটি নির্বাচনের জন্য কেন ১৮ মাস লাগছে বা লাগবে?

অধ্যাপক ইউনূস: অবশ্যই, আপনি বললেন, মানুষ বলছে অনেক সময় লাগছে। এমন মানুষও আছে, যারা বলছে ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন। সুতরাং মানুষ সব ধরনের কথা বলছে। আপনি থাকুন, নির্বাচন কেন? কার নির্বাচন দরকার?

মেহদি হাসান: ঠিক আছে, কিন্তু তাঁরা সেই লোক, যাঁরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। যাঁরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাঁরা বলছেন, আমরা কেন আরও দ্রুত নির্বাচন করতে পারিনি? দেরি কেন হচ্ছে?

অধ্যাপক ইউনূস: তারা যখন এ কথা বলে, তখন এটা গণতন্ত্রের বিষয় নয়। তারা কথা বলে সুশাসন নিয়ে। আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা দেখতে চাই, তাই আপনি থাকুন। কারণ, আমরা নির্বাচনের পর আবার বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে চাই না। আমি যা বলতে চাই, তা হলো আপনি একটি বক্তব্য তুলে ধরেছেন, অন্য বক্তব্যও আছে। কোন বক্তব্যটি বেশি শক্তিশালী...।

মেহদি হাসান: কিন্তু আপনি কি আজ আমাদের দর্শকদের বলতে চান, নির্বাচনে যেতে এত সময় লাগার কারণ কী?

অধ্যাপক ইউনূস: হ্যাঁ, আপনি নেপালের উদাহরণ দিয়েছেন। নেপালের সরকার আমাদের পরিভাষায় একধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অর্থাৎ আপনার দায়িত্ব একটি নির্বাচন আয়োজন করা। তাই সম্ভবত এটাই তাদের কাজ।

মেহদি হাসান: আপনারা কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নন?

অধ্যাপক ইউনূস: আমরা নই। আমরা অন্তর্বর্তী সরকার।

মেহদি হাসান: ঠিক আছে।

অধ্যাপক ইউনূস: আমাদের কত দিন থাকতে হবে, তা কেউ নির্ধারণ করে দেয়নি।

মেহদি হাসান: ঠিক আছে।

অধ্যাপক ইউনূস: আমরা কত দিন থাকব, সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত। তবে আমাদের বোঝাপড়া আছে যে আমাদের তিনটি কাজ রয়েছে। একটি হলো সংস্কার, আরেকটি বিচার ও শেষটি হলো নির্বাচন।

মেহদি হাসান: ঠিক আছে।

অধ্যাপক ইউনূস: তাই আমরা সংস্কারের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছি। এটি একটি বড় এজেন্ডা।

মেহদি হাসান: হ্যাঁ।

অধ্যাপক ইউনূস: কারণ, আপনি যদি শুধু একটি নির্বাচন করেন, তবে সেই পুরোনো জিনিসগুলো আবার ঘটবে। ভিন্ন নামে, ভিন্ন চিত্রে, আরও অনেকভাবে। আমাদের সংস্কার প্রয়োজন। আপনি যদি শুধু নির্বাচন করেন, তবে সবকিছুর একই পুনরাবৃত্তি হবে। কারণ, আইন, নিয়ম, পদ্ধতি একই থেকে যাবে।

মেহদি হাসান: হ্যাঁ।

অধ্যাপক ইউনূস: তাই ছাত্রদের নেতৃত্বে জনগণের একটি দাবি ছিল সংস্কার করা। নিশ্চিত করা যে সব শিকড় উপড়ে ফেলা হয়েছে, যাতে আপনার একটি ভিন্ন ধরনের কাঠামো থাকে, যেন এই জিনিসগুলো ফিরে আসতে না পারে। ফ্যাসিবাদ যেসব পথে প্রবেশ করে, সেই পথগুলো বন্ধ করে দেওয়া, যাতে তারা আর আসতে না পারে। তাই এটি আমাদের এজেন্ডা। এটি একটি বড় এজেন্ডা। তারপর বিচার।

সব ঘটনার জন্য দোষী সব ব্যক্তির বিচার, যা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাই ওই বিচার করার জন্য আমাদের একটি বিশেষ আদালত স্থাপন করতে হবে এবং যে ফলাফল আসে, তা দেখাতে হবে। আদালতব্যবস্থা থেকে দৃশ্যমান ফলাফল আসতে হবে যে তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয়টি হলো নির্বাচন। তাই আমাদের এই তিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, শুধু একটি নয়। নেপালে তারা শুধু নির্বাচন করছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘অধিকৃত অঞ্চল’ হিসেবে উপস্থাপন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন
সরকারের বিবৃতি / পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘অধিকৃত অঞ্চল’ হিসেবে উপস্থাপন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন
জলবায়ু তহবিলের ৮৯১ প্রকল্পে ২১১০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি: টিআইবি
জলবায়ু তহবিলের ৮৯১ প্রকল্পে ২১১০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি: টিআইবি
ইসির নিবন্ধন পাচ্ছে এনসিপিসহ তিন দল: ইসি সচিব
ইসির নিবন্ধন পাচ্ছে এনসিপিসহ তিন দল: ইসি সচিব
‎আগামী সাপ্তাহে ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনার বিচার হবে 
‎আগামী সাপ্তাহে ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনার বিচার হবে