
ইউরোপ মহাদেশের বলকান অঞ্চলের একটি রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়া। দেশটি দেখতে ফালি চাঁদের মত। বর্তমানে ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এটি। পর্যটনখাত এদেশের জিডিপির প্রায় ২০% পর্যন্ত অবদান রাখে। ১৯৯০ সালে স্বাধীনতা পাওয়া এই দেশটিতে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান। দেশটি সমভূমি, হ্রদ ও পাহাড়ে সমৃদ্ধ। পশ্চিমে দিনারীয় আল্পস পর্বতমালার বৃক্ষে আচ্ছাদিত, আর রয়েছে আড্রিয়াটিক সাগরের পর্বতসঙ্কুল তটরেখা। এই উপকূলে আরও আছে প্রায় হাজারখানেকের মত বিভিন্ন আকৃতির দ্বীপ। পর্যটন শিল্পের বেশিরভাগই উপকূল বরাবর কেন্দ্রীভূত।
পর্যটনে খরচ একসময় কম ছিল বলে সবধরণের বাজেটের পর্যটকের অবকাশ যাপনের পছন্দের স্থান ছিল এটি। কিন্তু দিন দিন ক্রোয়েশিয়া ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। যদিও দেশটির পর্যটন বোর্ড তা মনে করছে না৷
ক্রোয়েশিয়ার কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিই আজ-
জাদর : জাদর, যা ঐতিহাসিকভাবে জারা নামে পরিচিত, ক্রোয়েশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। তিন হাজার বছরের পুরনো শহরটি সংস্কৃতি ও ইতিহাসে সমৃদ্ধ। ইতিহাসপ্রেমী পর্যটকরা এই শহরের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন। এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে অসংখ্য রোমান স্থাপনা রয়েছে, রয়েছে অনেক পুরনো গীর্জা। যার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো গীর্জা দ্বাদশ শতকে নির্মিত সেন্ট ডোনাটস চার্চ। তাছাড়া এর সাদা-বালির সমুদ্র সৈকত, সামুদ্রিক খাবার ও সমুদ্রতীরবর্তী বারের জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত।
পুলা : দেশের সপ্তম বৃহত্তম শহর পুলা পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত। সাতটি পাহাড়ের সমন্বয়ে অবস্থিত দ্বীপবেষ্টিত একটি শহরটির মাছ ধরা, জাহাজ নির্মাণ এবং পর্যটনের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। শহরটির পুরনো সংকীর্ণ রাস্তাগুলো এখনও প্রাচীন রোমান পাকা পাথর দিয়ে সজ্জিত ও সারি সারি মধ্যযুগীয় এবং রেনেসাঁ যুগের ভবন দিয়ে ঘেরা। পুলা তার আজপর্যন্ত টিকে থাকা প্রাচীন ও বিশাল অ্যাম্ফিথিয়েটার ভবনের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। এটি ১ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত যা বিশ্বের ছয়টি বৃহত্তম টিকে থাকা রোমান অ্যারেনার মধ্যে একটি। আজও গ্রীষ্মকালীন চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য ব্যবহৃত হয় এটি। আরও দুটি উল্লেখযোগ্য এবং সুসংরক্ষিত প্রাচীন রোমান স্থাপনা হল খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীর বিজয়ী খিলান, সার্জি-র খিলান এবং অগাস্টাসের সহ-প্রাচীন মন্দির, যা রোমান সম্রাট অগাস্টাসের রাজত্বকালে ফোরামে খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। ইস্ত্রিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত পুলা এবং এর আশেপাশের ঐতিহ্য বহনকারী । এছাড়া শহরটিতে রয়েছে রোমান স্থাপত্যে নির্মিত অসংখ্য মন্দির।
জাগরেব : ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর জাগরেব দেশটির সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে এটি আধুনিক ক্রোয়েশিয়ার সংস্কৃতির হৃৎকেন্দ্র। শহরের উপরিভাগে রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপনা, সুশোভিত গীর্জা, টাওয়ার এবং অভিজাত ভবন। এখানে একাধিক শিল্পকলা প্রদর্শনীকেন্দ্র, গীতিনাট্যশালা, ইতিহাস ও বিজ্ঞান জাদুঘর, এবং শিল্পকলা, নাট্য ও সঙ্গীত অ্যাকাডেমি অবস্থিত। বহুকাল ধরে বিদেশী শাসনের অধীনে থাকা সত্ত্বেও জাগরেবের ঐতিহাসিক স্থাপত্য আজও অটুট। নগরীটি আড্রিয়াটিক সাগর ও বলকান উপদ্বীপ অঞ্চলে যাওয়া মহাসড়ক ও রেলপথগুলির সংযোগস্থলে অবস্থিত যেখানে প্রতি বছর বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হয়।
রোভিনিজ : রোভিনিজ শহর ক্রোয়েশিয়ার প্রাচীন একটি শহর। প্রকৃতির সৌন্দর্যে ঘেরা এই শহরে দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এই শহরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভ্রমণে আসেন। মানুষের কাছে এই শহর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
স্প্লিট : ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় বড় শহর স্প্লিট। রোমান স্থাপত্যে নির্মিত দর্শনীয় স্থানগুলোতে সবসময় পর্যটকের ভীড় দেখা যায়। এই শহরকে ভূমধ্যসাগরের ফুল হিসেবে বলা হয়। স্প্লিট শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা এর ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই শহরে অবস্থিত ডায়োকলেশিয়ান প্যালেস ২৯৮ থেকে ৩০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত হয়েছে।
হাভার : আদ্রিয়াটিক সমুদ্রে অবস্থিত একটি দ্বীপ হাভার। হাভার শহরটি ত্রয়োদশ শতকে নির্মিত হয়েছিলো। হাভার শহরে সপ্তদশ শতকে নির্মিত সেন্ট স্টিফেন ক্যাথেড্রাল নামে একটি গীর্জা পর্যটকদের কাছে খুব পছন্দের। এই শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে পর্যটকরা বিমোহিত হয়ে পড়েন।
কর্কা নদীর তীরে অবস্থিত কর্কা ন্যাশনাল পার্ক, কর্কুলা শহর, নৈসর্গিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ প্লিটভাইস ন্যাশনাল পার্ক, সমুদ্রসৈকতবেষ্টিত দুব্রোভনিক শহর পর্যটনের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
যাওয়ার উপায় :
বাংলাদেশে ক্রোয়েশিয়ার কোনো দূতাবাস না থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিএফএস-এর মাধ্যমে আবেদন জমা দেয়া যাবে৷ পূর্বে ভিসা পেতে আগ্রহীদেরকে ভারতের নয়া দিল্লিতে যেতে হলেও তবে গত বছরের (২০২৪) ৪ ডিসেম্বর থেকে ভিসা আবেদনে জমা নেওয়ার ঘোষণা দেয় ভিএফএস৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিএফএস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি অনুমোদ স্বাপেক্ষে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রতিনিধি হিসেবে তার আবেদনকারীদের বায়োমেট্রিক ডেটা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিসার আবেদন সংগ্রহসহ নানান সহযোগিতা করে থাকে৷
উল্লেখ্য, ক্রোয়েশিয়াতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই৷ সরকারের নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত দূতাবাস ক্রোয়েশিয়াতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে৷
মন্তব্য করুন