মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

অপরূপ মায়ায় ঘেরা রাঙামাটি, কোথায় ঘুরবেন

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২৬ পিএম

হ্রদ, নদী, ঝর্ণা, পাহাড়সমৃদ্ধ রাঙ্গামাটি পর্যটনের জন্য অপার সম্ভাবনাময়। একেক ঋতুতে এর রূপ বৈচিত্রময় ও মনোরম হওয়ায় সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। চট্টগ্রামের বৃহত্তর তিন পার্বত্য এলাকা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান ১৯৮৪ সালের আগে একসাথে একটি জেলা ছিল। পরবর্তীতে একটি স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে পরিচিতি পায় রূপে-গুণে বৈচিত্র্যময় রাঙ্গামাটি। পর্যটকরা যে কয়টি দর্শনীয় স্থান বিশেষভাবে পছন্দ করে সেগুলোতে পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবসমেত ঘুরে আসতে পারেন আপনিও।

আসামবস্তি কাপ্তাই সড়ক-

একপাশে কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশি, অন্যদিকে সারি সারি দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড়। মাঝখানে রাঙামাটির পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করা উঁচুনিচু সর্পিল পথ। কাপ্তাই থেকে রাঙামাটি শহরে যাওয়ার একটি বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয় ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটি। এই সড়ক ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেড়েছে কৃষি বাণিজ্য। সহজ যোগাযোগ ও কম সময়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে দর্শনার্থীদের। সরকারি ছুটির দিন এবং শুক্র-শনিবারে মানুষ বেশি যায়।

হ্রদ-

রাঙ্গামাটির নীল জলা হ্রদটি আসলে কাপ্তাই হ্রদ, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এই বিশাল জলরাশির সৃষ্টি হয় এবং এর চারপাশের পাহাড় ও অরণ্যের অপরূপ মেলবন্ধনের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ৭২৫ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল আকৃতির কাপ্তাই হ্রদের টলটলে পানিতে নৌ-ভ্রমণ পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে সমাদ্রিত। এর কোল ঘেষে নির্মিত হয়েছে নানাধরণের রিসোর্ট।

হ্রদে নৌভ্রমণের জন্য শহরের পর্যটন ঘাট, তবলছড়ি, ফিশারিঘাট, রিজার্ভবাজার, সমতাঘাট ও শিল্পকলা ঘাট থেকে পর্যটকবাহী বোট ছাড়ে। ৫ ঘণ্টার নৌভ্রমণে খরচ পড়ে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকা। ভ্রমণে দেখা যাবে সুবলং ঝরনা, মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধি, ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি, মায়াবী আইল্যান্ডসহ নানা জায়গা।

ফুরোমন পাহাড়-

আপনি ভিষণ এডভ্যাঞ্চারপ্রেমী হলে মেঘে ঘেরা ফুরোমন পাহাড় প্রধাণ্য পাবে সবার আগে। ৫ ঘন্টা হেঁটে ২৩ কি.মি. হেঁটে ভোর ৫টায় পাহাড়ের চূড়ায় পৌছালে দেখা পাওয়া যাবে মেঘ ফুঁড়ে সূর্য উঁকি দেয়ার এক অবাক করা সৌন্দর্য। শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সাপছড়ি এলাকায় অবস্থিত এ পাহাড়টির উচ্চতা ১ হাজার ৫১৮ ফুট। গ্রীষ্মকালে আসলে রুক্ষ ও শুষ্ক পাহাড় দেখা যাবে। আবার শীত মৌসুমে দেখা মিলবে শিশিরে ভেজা মেঘে ঢাকা আকাশ আর পাহাড়।

শুভলং ঝর্ণা-

সদর থেকে মাত্র ২৫ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত সুবলং ঝর্ণা। বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১৪০ ফিট উঁচু পাহাড় থেকে বিপুল জলধারা কাপ্তাই লেকে আছড়ে পড়ে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের কিছু স্থাপনা ও খাবারদাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ঝর্ণায় প্রবেশ করতে দর্শনার্থীদের টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়।

মেঘের রাজ্য সাজেক-

চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এর মধ্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাজেক ভ্যালি। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রঙ বদলায়। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই ভ্রমণ গন্তব্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। এটি রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আপনাকে খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হবে। সাজেকে মেঘ দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ভোরবেলা। পর্যটকদের কাছে সবচয়ে আকর্ষণীয় স্থান কংলাক পাড়া, হ্যালিপ্যাড, রুইলুই পাড়া, রক গার্ডেন, লুসাই ভিলেজ উল্লেখযোগ্য। কংলাকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত আপনার ভ্রমণ জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হয়ে থাকবে। বর্ষার শুরু থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত, অর্থাৎ মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ থাকে বলে এসময় সাজেক বেশি সুন্দর।

ঝুলন্ত সেতু-

রাঙামাটি শহরের শেষপ্রান্তে কাপ্তাই লেকের উপর অবস্থিত ৩৩৫ ফুট লম্বা একটি সেতু, যা 'সিম্বল অফ রাঙ্গামাটি' নামেও পরিচিত। লেকের দুটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়কে সংযুক্ত করেছে এটি। হাঁটার সময় মৃদুমন্দ দুলতে থাকে নয়নাভিরাম বহুরঙা এই ঝুলন্ত সেতুটি। এর উপর দাঁড়িয়ে কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। অপর পারেই রয়েছে আদিবাসী গ্রাম। ইচ্ছে হলেই দেখতে পাবেন আদিবাসী জীবনযাপনের ক্ষয়িষ্ণু চালচিত্র। তবে বর্ষাকালে প্রায়সময় সেতুটি পানির নীচে ডুবে থাকে বলে শীতকালই ভ্রমণের জন্য শ্রেয়।

রাজবন বিহার-

বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এই বিহার রাঙামাটি শহরের অদূরেই অবস্থিত, যা একটি আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ তীর্থস্থান। শহরের ব্যস্ততার যান্ত্রিক জীবনের মাঝে এ যেন একটুকরো নিশ্চুপ স্থির শান্ত লোকালয়। আপনি যে ধর্মেরই অনুসারী হন না কেন, এখানকার পরিবেশ আপনার ভাল লাগবে। মায়াবী কাপ্তাই লেকের পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজবৃক্ষ বেষ্টিত রাজবন বিহার যাওয়া যায় নৌপথে রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে আবার রাঙামাটি স্টেডিয়ামের পাশের সড়ক ধরে মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় এই রাজবন বিহারে।

পলওয়েল পার্ক-

নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে এবং চিত্ত বিনোদনের জন্য প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে পলওয়েল পার্ক। কাপ্তাই লেকের কোল ঘেষে অনন্য নির্মাণশৈলী, বৈচিত্র্যময় ল্যান্ডস্কেপ ও চিত্তাকর্ষক পরিবেশে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন।

হাউজবোট-

রাঙামাটি পৌঁছে থাকার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যবস্থা হলো হাউজবোট। হ্রদে ভেসে থাকা এসব নৌবাড়ি এখন অন্তত ১৫টি। প্রমোদিনী, রাঙাতরী, সুখেরতরী, লুসাই দ্য ওয়াটার ভিলা, মাওরুম, স্বপ্নডিঙ্গি, রয়েল অ্যাডভেঞ্চার, আর্ক দ্য কাপ্তাই, ডিভাইন ক্রাফট, লেক অ্যাম্বাসেডরসহ বেশ কিছু হাউজবোট জনপ্রিয়। ভাড়া ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে। অধিকাংশ হাউজবোটের বুকিং হয় ফেসবুক পেজের মাধ্যমে।

যেভাবে যাবেন-

ঢাকা থেকে রাঙামাটি যেতে পারেন বাসে। সেক্ষেত্রে আরামবাগ, সায়েদাবাদ, গাবতলী, কমলাপুর, পান্থপথ, ফকিরাপুল থেকে রাঙামাটি যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। শ্যামলী, সেন্টমার্টিন, ইউনিক, ডলফিন, গ্রীনলাইন, রবি এক্সপ্রেস, এভারগ্রিন, রিল্যাক্স পরিবহনের বাস নিয়মিত চলে। রাতে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে বেশিরভাগ বাস ছাড়ে। ভ্রমণের সময় প্রায় ৭ ঘণ্টা। সকালেও কিছু বাস ছাড়ে, তবে আগেভাগে টিকিট কাটা জরুরি।

চট্টগ্রাম থেকে: বালুচরা বাসস্টেশন থেকে ‘পাহাড়িকা’ পরিবহনের নন-স্টপ বাসে ২ ঘণ্টায় রাঙামাটি পৌঁছানো যায়। লোকাল বাসে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সেন্টমার্টিন খুললেও পর্যটকদের যাত্রায় অনিশ্চিত
সেন্টমার্টিন খুললেও পর্যটকদের যাত্রায় অনিশ্চিত
১লা নভেম্বর থেকে কোন জাহাজ ছাড়ছে না সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে
১লা নভেম্বর থেকে কোন জাহাজ ছাড়ছে না সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে
জার্মানির ভিসা আবেদনকারীদের জন্য দূতাবাসের সতর্কবার্তা
জার্মানির ভিসা আবেদনকারীদের জন্য দূতাবাসের সতর্কবার্তা
সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত হচ্ছে শনিবার, মানতে হবে ১২ নির্দেশনা
সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত হচ্ছে শনিবার, মানতে হবে ১২ নির্দেশনা