
		বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা ৩ দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে আমরণ অনশনে বসলে তাদের সঙ্গে একই মেঝেতে রাত কাটিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম।
ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগে ববি উপাচার্য কর্মসূচি স্থলে এসে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করে জানান, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে আমরা সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রকাশ পাবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেয়। এরপরই শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে সরাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত দিবাগত রাত ১টার দিকে একাডেমিক ভবন-১ এর নিচে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের পাশে মশারি টাঙিয়ে শুয়ে পড়েন। সকাল ৯টা পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন। ববির ইতিহাসে এমন ঘটনার নজির এটাই প্রথম। এ ঘটনার ছবি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগেও টানা ৩৭ দিন ধরে আন্দোলন চলাকালে উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন ৬ দিন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নেন।
দাবি আদায়ে মানববন্ধন থেকে শুরু করে গণস্বাক্ষর, অবস্থান কর্মসূচি, মহাসড়ক অবরোধ সবই করেছেন তারা। গত ২৭ আগস্ট রাতে নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ও বিটাক ভবনে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, ৩৭ দিনের মধ্যে পাঁচ দিন তারা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বিবেচনায় এবার তারা অনশনের অন্য পথ বেছে নিয়েছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দেন তারা ।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সার বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান। জমি অধিগ্রহনের নানা ধাপ এগোচ্ছে। আস্থার সংকটের কারণে অনশন পর্যন্ত পৌঁছেছে শিক্ষার্থীরা।
অনশনরত আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শওকত ওসমান স্বাক্ষর বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে যৌক্তিক ৩ দফা দাবি নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে আসলেও ইউজিসি আমাদের সাথে কোন রকমের যোগাযোগের চেষ্টাও করেনি। তাই আমরণ অনশনের মত কঠিন কর্মসূচিতে বসতে বাধ্য হয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই অনশন কর্মসূচি চলবে।
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষার্থী তাইজুল ইসলাম তাজ বলেন, আমরা ইউজিসির প্রতি আহ্বান করে দুইবার সংবাদ সন্মেলন করেছি, এমনকি প্রতিকী ভাবে নভোথিয়েটার ও বিটাক দখল করার পরও আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি। আমাদের সাথে যদি কেউ যোগাযোগ করে কোন প্রতিশ্রুতি না দেওয়া পর্যন্ত অমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করে যাব।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান। জমি অধিগ্রহনের নানা ধাপ এগোচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আস্থার সংকটের কারণে অনশন পর্যন্ত পৌছেছে শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান। জমি অধিগ্রহণের নানা ধাপ এগোচ্ছে। আস্থার সংকটের কারণে অনশন পর্যন্ত পৌঁছেছে শিক্ষার্থীরা।’
অনশনে বসা ৭ শিক্ষার্থী হলেন- ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিলা জামান সেঁজুতি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২-২৩ সেশনের অমিয় মন্ডল, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের তাজুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের আবুবকর সিদ্দিক, দর্শন বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের পিয়াল হাসান, লোকপ্রশাসন ২০২১-২২ তামিম আহমেদ রিয়াজ, আইন বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শওকত ওসমান স্বাক্ষর।
দাবি তিনটি হল- বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ধাপের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। পরবর্তী একনেকে বাধ্যতামূলকভাবে অনুমোদন এবং কাজ শুরুর বিষয়ে সরকার, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ বাকি দেড়শ একর জমি দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ, কোন স্থান থেকে কত একর জমি অধিগ্রহণ, কতদিনের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে যৌক্তিক পরিকল্পনাসহ প্রজ্ঞাপন জারি।
স্বতন্ত্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ পরিবহন নিশ্চিত। কতদিনের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে তার পরিকল্পনা প্রকাশ এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিআরটিসি বাসের মাধ্যমে শতভাগ পরিবহন নিশ্চিত করা।
মন্তব্য করুন