
		এইচএসসি ২০২৫ সালের ফলাফল প্রকাশের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। জেলার বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ফলাফল এতটাই করুণ যে, কোথাও কোথাও একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি।
জেলার বিভিন্ন কলেজে ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানে পাসের হার ১০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এমনকি সরকারি কলেজেও কিছুক্ষেত্রে পাশের হার ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় স্পষ্টভাবে নিম্নমুখী।
জেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সাধারণ, আলিম, কারিগরি ও ভোকেশনাল মিলে ১৪ হাজার ২০৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তার মধ্যে ৭ হাজার ৬৯০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২৫ জন।
নবীনগরের জিনোদপুর ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ, বিজয়নগর উপজেলার চানপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ ও নিদারাবাদ ইউনিয়ন হাই স্কুল এন্ড কলেজে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। জেলার মাদ্রাসা ও কারিগরি কলেজগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণেও উঠে আশা চিত্র আশাব্যঞ্জক নয়। জেলার অন্তত ৫-৮টি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফলাফলের অবনতি লক্ষ্য করা গেছে।
এই হতাশার মাঝে কিছুটা আশার আলো জেলা জুড়ে ছড়িয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ এসেছে এই কলেজ থেকেই ১৮৫টি। তবে অন্যান্য কলেজে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ থেকে ২০-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। যদিও কয়েকটি ছোট কলেজ ১০০ শতাংশ পাসের তকমা অর্জন করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার্থী ছিল মাত্র ২ থেকে ২০ জন। ফলে এই সফলতা সামগ্রিক দুরবস্থা ঢাকতে ব্যর্থ।
একাধিক প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে খারাপ ফলাফলের ধারা বজায় থাকায় অভিভাবক ও সচেতন মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজগুলোর শিক্ষার মান, একাডেমিক পরিকল্পনা, নিয়মিত ক্লাসের সংখ্যা, শিক্ষক উপস্থিতি এবং শিক্ষার্থী মনোবল সবকিছু নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
শিক্ষাবিদদের মতে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত ও একাডেমিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত মনিটরিং, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে ভারসাম্য এবং আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির প্রয়োগ ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তি মিলবে না।
মন্তব্য করুন