বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

শৈশব রাঙানো আজ মীনা দিবস

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০১ এএম

আজ ২৪ সেপ্টেম্বর মীনা দিবস। মীনা উজ্জ্বল, উচ্ছ্বল, উদ্দীপনা ও উৎসাহের প্রতীক। দক্ষিণ এশিয়ার কোটি কোটি শিশুর কাছে মীনা একটি শক্তি ও প্রেরণার নাম; সাহস, সমতা আর শিক্ষার প্রতীক। যে সব বাধা বিপত্তি ও প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে শিক্ষার আলোর পথে ছুটে চলে। কারণ, শিক্ষাই তাকে দেবে কাঙ্খিত মুক্তি, পূরণ করবে স্বপ্ন।

শিশুদের অধিকার রক্ষার সচেতনতা বাড়াতে ১৯৯৮ সাল থেকে মিনা দিবস পালিত হয়ে আসছে। সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব রিজিওনাল কো–অপারেশন, সংক্ষেপে সার্ক, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালকে মেয়েশিশুর দশক হিসেবে ঘোষণা করে। এ উপলক্ষে একটি অ্যানিমেটেড সিরিজ তৈরি করে দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের আনন্দ ও উৎসাহ দিতে চেয়েছিল জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। মীনা নিয়ে ভাবনার শুরু তখন থেকেই।

মীনা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত একটি জনপ্রিয় টিভি কার্টুন ধারাবাহিক। ১৯৯৩ সালে প্রথম এটি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। কার্টুন ধারাবাহিকের মূল চরিত্র ‘মীনা’ বাংলা ভাষায় নির্মিত কার্টুনগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র। বাংলাসহ ২৯টি ভাষায় মীনা তৈরি হয়েছে।

কার্টুন ড্রামাটি প্রচার করা হয় সার্কভুক্ত সাতটি দেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। কার্টুন ছাড়াও কমিক বই ও রেডিও অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়েছে। এর স্রষ্টা বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মোস্তফা মনোয়ার। এই কার্টুনটির সূচনা সংগীতটি শিশুদের কাছে খুব প্রিয়।

নব্বইয়ের দশকে ইউনিসেফ নির্মিত এই চরিত্রের কাহিনী খুব অল্প সময়েই গ্রামীণ সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। মীনা কার্টুন চরিত্রে মীনার বয়স নয় বছর। এই কার্টুন এর আরও দুটি চরিত্রের নাম মিনার ভাই রাজু আর পোষা পাখি মিঠু।

লিঙ্গ বৈষম্য রোধ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচতেনতা ও শিশু নিরাপত্তার গুরুত্ব নিয়ে মিনা কার্টুনের গল্পগুলো তৈরি করা হয়। যৌতুককে না বলা, বাল্য বিয়েকে না বলা, ছেলে ও মেয়ে সন্তানকে সমান গুরুত্ব দেয়া, সমান অধিকার পেলে মেয়েরাও অনেক কিছু করতে পারে, এইচাইভি আক্রান্ত মানুষকে আলাদা চোখে না দেখা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা, বন্যার সময় করণীয় কাজ, মেয়েদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখা, শিশুর ডায়রিয়া হলে করণীয়, শহরে গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন রোধ ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যেও এ কার্টুন প্রচারিত হয়।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে শিশুদের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে বহু অগ্রগতি ঘটেছে বটে, কিন্তু এখনো দীর্ঘ পথ বাকি। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারের হার বেড়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুদের সংখ্যা আশাব্যঞ্জকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে এসব নি:সন্দেহে ইতিবাচক অর্জন। কিন্তু শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া, অপুষ্টি, শারীরিক শাস্তি এবং মানসম্মত শিক্ষা না পাওয়ার মতো সমস্যা এখনো শিশুদের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করছে। অনেক শিশু পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, অনেক কিশোরী অনিচ্ছাকৃতভাবে বাল্যবিবাহে বাধ্য হয়েছে।

মীনা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিশুরা ভবিষ্যতের জন্য নয়, তারা বর্তমানেরও নাগরিক। তাদের মতামত, আনন্দ, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে আসলে আমাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করা। মীনার মতো প্রতিটি শিশুই যেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারে- "আমি পারি" সেই পরিবেশ গড়ে তোলাই হবে প্রকৃত সাফল্য।

সরকার, এনজিও ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সহায়তায় ইউনিসেফ প্রতি বছর জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ভিত্তিক, ও কমিউনিটি পর্যায়ে মীনা দিবস উদযাপন করে থাকে।

এ দিবস উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে র্যালি, মীনাবিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, যেমন খুশি তেমন সাজো ইত্যাদি কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়ে থাকে। শিশুর অধিকার রক্ষার লড়াই মানে একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার লড়াই। তাই মীনা দিবস কেবল একটি তারিখ নয়, বরং একটি অঙ্গীকার-আমাদের শিশুদের জন্য এক আলোকিত আগামী গড়ার প্রতিশ্রুতি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
‘ডিজিটাল মিডিয়া এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেলেন কুদরত উল্লাহ
‘ডিজিটাল মিডিয়া এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেলেন কুদরত উল্লাহ
তিন গোয়েন্দার রকিব হাসান এখন না ফেরার দেশে
তিন গোয়েন্দার রকিব হাসান এখন না ফেরার দেশে
ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক লাইফ সাপোর্টে
ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক লাইফ সাপোর্টে
‘শৈশবের দুঃস্বপ্ন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
‘শৈশবের দুঃস্বপ্ন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন