মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

সমবায়ের মাধ্যমে সভ্যতা ফিরিয়ে আনার আহ্বান আনু মুহাম্মদের

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সমাজে সভ্যতা ফিরিয়ে আনতে হলে সমবায় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা আরও জোরদার করতে হবে। শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক খাতে ক্রমবর্ধমান বেসরকারিকরণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ও সন্তানদের শিক্ষাব্যয় নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন, কারণ এই দুই খাত আজ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে।”

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আফতাবনগরের সম্প্রীতি ভবনের ড. আখতার হামিদ খান মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক সমবায় বর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘দি সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (সিএসএল)’ আয়োজিত ওই সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে সমবায়’

সভাপতিত্ব করেন সিএসএল সভাপতি ও সম্প্রীতি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী এমদাদ হোসেন মালেক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারের সাবেক সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ।

সেমিনারের মুখ্য আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, “উন্নত পৃথিবী গড়তে হলে ধনী-গরিব বৈষম্য কমাতে হবে। কেউ থাকবে আটতলায়, কেউ থাকবে গাছতলায়—এভাবে উন্নত সমাজ সম্ভব নয়। ক্রেডিট ইউনিয়নের মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে।”

বিশেষ অতিথি সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক মো. আহসান কবীর (ইপিপি) বলেন, “উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া নেতৃত্ব দিয়ে কোনো সংগঠনের উন্নয়ন সম্ভব নয়।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগের যুগ্ম নিবন্ধক মো. কামরুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দি সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান।

সভাপতির বক্তব্যে এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, “ক্রেডিট ইউনিয়ন সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। সরকারের উচিত এই উদ্যোগগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমবায় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।”

মূল প্রবন্ধে মো. হুমায়ুন খালিদ বলেন, “জাতিসংঘ বুঝতে পেরেছে—স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়নে সমবায় ব্যবস্থা শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে সমবায়কে পাশে পাওয়ার জন্য জাতিসংঘ অনেক আগেই ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভ অ্যালায়েন্সকে আহ্বান জানিয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, “২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্রে একমাত্র সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই টিকে ছিল এবং মুনাফা অর্জন করেছিল।”

ওয়ার্ল্ড কো-অপারেটিভ মনিটর ২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৩ কোটি সমবায় প্রতিষ্ঠানে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। বিশ্বের শীর্ষ ৩০০ সমবায়ের বার্ষিক আয় প্রায় ২ হাজার ৪০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার—বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। সমবায় খাতে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের, যা বিশ্বের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশে বর্তমানে রয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৭১টি নিবন্ধিত সমবায় সমিতি, সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ। এসব সমবায়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৬ জনের, মোট মূলধন প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমবায় খাতের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৪৯৬৬.৪৫ লাখ টাকায়। বর্তমানে এই খাত ৩৫টি উপশাখায় কাজ করছে—যেমন কৃষি, মৎস্য, পোলট্রি, গবাদিপশু, চামড়াশিল্প, আবাসন, পরিবহন, ক্ষুদ্রশিল্প, স্বল্প আয়ের মানুষের ঋণদান, দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদন, সঞ্চয়, বিমা ও সেবামূলক কার্যক্রম।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে করদাতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
যেমন থাকবে আজকের রাজধানীর আবহাওয়া
যেমন থাকবে আজকের রাজধানীর আবহাওয়া
আইইবি’র ষষ্ঠ বার্ষিক পেপার মিট ২০২৫-এর লোগো ও ট্রফি উন্মোচন
আইইবি’র ষষ্ঠ বার্ষিক পেপার মিট ২০২৫-এর লোগো ও ট্রফি উন্মোচন
রাজধানীতে আজ কোথায় কী?
রাজধানীতে আজ কোথায় কী?
১০ মাসে ৩ হাজার আ.লীগ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার ঝটিকা মিছিল থেকে
১০ মাসে ৩ হাজার আ.লীগ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার ঝটিকা মিছিল থেকে