
		ভারতকে ফেলে বাংলাদেশকে টেনে নিলো আমেরিকা
জুনায়েদ আলী সাকী, বৈশাখী সংবাদ
দীর্ঘদিনের বাণিজ্য সম্পর্কের অচল অবস্থার একটা গতি এলো এবার। আর এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কার সম্পর্ক কেমন, তাও প্রমান হলো। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচিত হয় বিশ্ববাজার এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য উন্নত বিশ্বের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানা-পোড়েন দৃশ্যমান হয় সে দেশে জিএসপি সুবিধা বাতিলের মাধ্যমে।
১৬ বছর জোর করে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী সরকারের আমলে, ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাতিল করে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা। কারণ হিসেবে তাজরিন ফ্যাশনসে আগুন এবং রানা প্লাজা ধ্বসের পর কল-কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নত করা সহ শ্রম অধিকারের বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর নাখোশ হওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সেস বা জিএসপি হলো এমন একটি বাণিজ্য সুবিধা যা উন্নত দেশগুলো কিছু উন্নয়নশীল দেশকে তাদের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকে। এই ছাড়ের ফলে, উন্নয়নশীল দেশগুলো, উন্নত দেশে শুল্কমুক্ত বা স্বল্প শুল্কে তাদের পণ্য রপ্তানি করতে পারে। জিএসপি সুবিধা বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে দেয়া হয়। কিছু দেশ তাদের বাজারে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের উপর শুল্ক ছাড় দেয়, আবার কিছু দেশ নির্দিষ্ট কিছু দেশের জন্য তাদের বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে জিএসপি সুবিধা ভোগ করতো বাংলাদেশ। ফলে, বাংলাদেশ থেকে এই দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে পাওয়া যেত শুল্ক ছাড়।
দীর্ঘ এক যুগ পর আবারও সৃষ্টি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বিদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করেন। অর্থাৎ বাংলাদেশি ১০০টাকা দামের একটি পণ্যের দাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অন্তত ১৩৫ টাকা। এর ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে বিপাকে পড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো। সবাই নিজ নিজ চেষ্টায় দেন-দরবার করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। আর এর মাধ্যমে প্রমান পাওয়া যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কার সম্পর্ক কেমন।
৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় দফা শুল্ক আলোচনা শেষে, স্টেটমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানায় হোয়াইট হাউজ। আগে এই শুল্ক ছিলো ৩৭ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফা বাণিজ্য সংলাপের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ ইতিবাচক অগ্রগতির ইঙ্গিত পেয়েছিল। শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন।
দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বেশি ছাড় পেয়েছে আফগানিস্তান, আর সবচেয়ে কম ছাড় পেয়েছে ভারত। শুল্ক নিয়ে হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় জানানো হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানে ১৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২০ শতাংশ এবং ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
বলা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করা হয় ভারতে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তুলনামূলক কম শুল্ক আরোপের তালিকায় আছে ব্রাজিল ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ এবং ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ। আর তুলনামূলক বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে মিয়ানমারে ৪০ শতাংশ।
মন্তব্য করুন