
		প্রায় সাড়ে ছয় বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২৯ বছরের বিরতি দিয়ে ২০১৯ সালের মার্চে হওয়া সেই নির্বাচনও ছাত্রলীগের দাপট, ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগে কলঙ্কিত হয়েছিল।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৩৮তম ডাকসু নির্বাচন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে ১৮টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন।
প্রার্থীর সংখ্যা বেশি এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ হওয়ায় এবারের ডাকসু নির্বাচনে অধিকাংশ পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো জড়িয়ে পড়ায় ধারণা করা হচ্ছে, ছাত্র সংসদে জয়-পরাজয় জাতীয় নির্বাচনকেও প্রভাবিত করতে পারে। ফলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে সারাদেশে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
ডাকসুর শীর্ষ তিন পদে ১৯ থেকে ৪৪ জন প্রার্থী হয়েছেন। তবে জয়ের লড়াইয়ে রয়েছেন চার থেকে ছয়জন করে। হল সংসদেও একই অবস্থা। ফলে কোন প্যানেল বা প্রার্থী জয়ী হবেন– এমন ধারণা ভোটের আগের দিনও করা যায়নি।
সবকিছু ছাপিয়ে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন উৎসবের আমেজ। ১৩ দিনের নির্বাচনী প্রচারে কথার লড়াই এবং সামাজিক মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি সাইবার বুলিংয়ে উত্তেজনা ছড়ালেও এবার নির্বাচন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়নি। কেউ কারও প্রচারে বাধা দেয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রতিপক্ষের প্রচারে ছাত্রলীগ হামলা করলেও এবার তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এর পরও শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য মোতায়েন থাকবে দুই হাজার পুলিশ। ডাকসুর ২৮টি পদে এবার প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন। অন্যদিকে ১৮টি হলে ২৩৪ পদে ১ হাজার ৩৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী ৪৪ জন।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন; কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৪ জন এবং সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার কারণে ডাকসুকে ‘ছোট সংসদ বা মিনি পার্লামেন্ট’ বলেন কেউ কেউ।
এবারের নির্বাচনে ১০টি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, মুসলিম ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও জাতিগোষ্ঠীর ছাত্রদের জগন্নাথ হলের ভোট, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট এবং নারীদের পাঁচটি হলের ভোটাররা বড় ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন।
মন্তব্য করুন