মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

আসলেই কি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতিত শিবির?

বৈশাখী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৯ পিএম
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১৩ পিএম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে অন্যান্য রাজনীতি চললেও প্রায় ৪০ বছর নিষিদ্ধ ছিল ইসলামি ছাত্র শিবির।

অভিযোগ রয়েছে, শিবির পরিচয় পেলে তার ওপর নির্মম নির্যাতন পর্যন্ত করা হতো। এর মধ্যেও দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা থামানো যায়নি। দীর্ঘ ৩ যুগ পর সেই জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ২৫ পদের মধ্যে ২০টি পদ এখন ছাত্রশিবিরের প্যানেল সদস্যদের হাতে। এটা কি ভাবা যায়? কোনদিন কি কল্পনাও করতে পেরেছে কেউ ? অথচ বামপন্থীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত এই ক্যাম্পাসের ফলাফল ঘোষণার সময় 'আল্লাহু আকবর' স্লোগান দিতেও দেখা যায় শিবির কর্মীদের।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ অবস্থায় শিবির যে কৌশলে কাজ চালিয়ে গেছে তা অনেকটা থ্রিলার মুভিতেই দেখা যায়। শাখাটি ছিলো শিবিরের টপ সিক্রেট জোন। ছাত্র শিবির জাবিতে নিজেদের মাঝে যোগাযোগ বা একে অপরকে চিনত "কেজা" কোড ব্যবহার করে। কেজা মানে কেন্দ্র জানে। তাদের প্রত্যেক কর্মীর একটি সাংগঠনিক নাম থাকতো। থাকতো প্রত্যেক গ্রুপ ও কমিটির একটি কোড নেম। যার মাধ্যমে তারা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতো।

এগুলো আবার কিছুদিন পরপর পরিবর্তন হতো- যাতে কারো মাধ্যমে প্রকাশ না হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাড়া এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের কথা, এক হল কমিটি অন্য হল কমিটির পরিচয় জানতো না। এমন কৌশলের কারণ ব্যাখ্যা করলেন জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব বলছেন, এখানে অতিথি পাখি মারলেও বিচার হয়। অথচ শিবির কর্মীকে মারলে বিচার হতো না।

তার অভিযোগ, শিবির করার কারণে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে ছাত্রত্ব না নিয়েই ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে। ১৯৯৪ সালে ভর্তি পরীক্ষার ভাইভা দিতে এলে শুধুমাত্র শিবিরের ডায়েরী পাওয়ায় কামরুল নামে এক ভর্তিচ্ছুকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। যেখানে টুপি ব্যবহার করতেও ভয় হতো এমন অভিযোগও করছে সংগঠনটি। শিবির সন্দেহ করা হলেই তার উপর নেমে আসতো কঠিন নির্যাতন।

এমন আরো অভিযোগ সামনে আনছেন ক্যাম্পাসের সাবেক নেতারা। জাবির সাবেক সভাপতি রাকিব হোসেনের অভিযোগ, ২০০৯ সালে শহীদ সালাম বরকত হলের ৩০৯ নং রুমে শিবির সন্দেহে কয়েকজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এছাড়া ভাসানী হলে শাহাবুদ্দিন তানিম নামে আরেক শিবির নেতাকে একই কায়দায় নির্যাতন করে পংগু হাসপাতালে ফেলে রেখে আসা হয়েছিল বলে জানান তিনি। যাদেরকে নির্যাতন করা হয়েছিল সবাইকে নামাজি থেকেই শিবির সন্দেহ করা হয়েছিল বলে ধারণা তার।

এমন অবস্থা থেকেই মূলত জুলাই আন্দোলনের পর গত বছরের অক্টেবরে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আসেন সংগঠনটি। গত এক বছর বিনা বাধায় নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। আর সবশেষ তিন দশকের বেশি সময় নিষিদ্ধ দলটি ছাত্র সংসদে কেবল নিজেরা পুরো প্যানেলে জয়লাভ করেনি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে সম্পূর্ণ আউট করে দিয়েছে সুনিপুণ কৌশলে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সড়ক অবরোধ করে বসে পড়লেন নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা
সড়ক অবরোধ করে বসে পড়লেন নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইউরোপ ও ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা বিনিময়
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইউরোপ ও ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা বিনিময়
এবার বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিতে পারবে বৃত্তি পরীক্ষায়
এবার বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিতে পারবে বৃত্তি পরীক্ষায়
প্রাথমিকে হল সংগীত ও শরীরচর্চার শিক্ষক পদ
প্রাথমিকে হল সংগীত ও শরীরচর্চার শিক্ষক পদ