
গত বছরের মন্দ অভিজ্ঞতা দূর করতে আগেভাগে কাজ শুরু করেও বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া নিয়ে শঙ্কা করা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের হঠাৎ পুনর্বিজ্ঞপ্তির আদেশে এবার বই ছাপার কাজে বড় বাগড়া পড়েছে। বছরের শেষ প্রান্তে এসেও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ের মুদ্রণের কাজই এখনো সম্পূর্ণ ভাবে শুরু করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় সাড়ে ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হবে, যার মধ্যে মাধ্যমিকের বই ২১ কোটি ৯০ লাখ। নবম শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ কোটি। গত অক্টোবর মাসের মধ্যে এসব বই ছাপানো শেষ করার টার্গেট থাকলেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এখন পর্যন্ত নবম শ্রেণির মাত্র ২০ লাখ বই ছাপিয়েছে।
এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানান, নভেম্বরের শুরুতে কেবল একটি শ্রেণির বই ছাপার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরো তিনটি শ্রেণির বই ছাপার কিছুই শুরু হয়নি। এছাড়া সেগুলো শুরু করতেও আরও কিছুদিন লাগতে পারে বলে জানা গেছে। এই তিন শ্রেণির বইয়ের দরপত্র মন্ত্রণালয় কারণ ছাড়া আটকে দেওয়ার ফলে এই সংকট।
এদিকে বাইন্ডিং (বাঁধানো) সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৫৪ হাজার কপি। অর্থাৎ মাত্র এক শতাংশ। বর্তমানে ২২১টি লটে কাজ চলছে, ১৩টি লট নন-রেসপনসিভ থাকায় পুনঃদরপত্রে পাঠানো হচ্ছে।
ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সাড়ে ১৪ কোটি বই ছাপা এখনো শুরু হয়নি। এ কারণে আগামী মার্চ মাসের আগে, অর্থাৎ শিক্ষাবর্ষের দুই মাস সব বই না পেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে প্রায় ১ কোটির বেশি শিক্ষার্থী।
গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে দেরিতে বই ছাপানোর বিষয়টি অনেকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিল। কিন্তু এবার পাঠ্যবই বিলম্বে ছাপানোর বিষয়ে কোনো অজুহাত কেউ মানতে রাজি নয়।
আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সব রাজনৈতিক দল। জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে দেশের সব প্রেসে এক ধরনের চাপ শুরু হবে। এদিকে তিন শ্রেণির বই ছাপার চুক্তি এখনো করতে পারেনি এনসিটিবি। ফলে নির্বাচনের চাপে বই ছাপার কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা করছেন অনেকে।
বিলম্বের জন্য ছাপাখানার মালিকরা দায়ী করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তাদের গাফিলতিকে। অন্যদিকে এনসিটিবির কর্মকর্তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপরে দায় চাপিয়ে বলেন, পাঠ্যবই ছাপায় বিলম্বে এনসিটিবির কোনো দায় নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো কারণ ছাড়াই মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের ক্রয়াদেশে অনুমোদন না দিয়ে টেন্ডার বাতিল করেছিল। এ কারণেই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভাঙতেই পুনরায় টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিটেন্ডারেও সিন্ডিকেট ভাঙেনি। উলটো বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। অনেক ছাপাখানা রিটেন্ডারে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অনেক কম দরে কাজ নিয়েছে। এতে নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্তব্য করুন