
		জুলাই গণ অভ্যুত্থানের একবছর পূর্তি আজ। এই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে আলোচিত সমালোচিত হয়েছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে। তিনি উত্তরে যা বললেন-
বৈশাখী অনলাইন-গণ অভ্যুত্থান বা জাগরণ এর ভিন্ন দিকও থাকে। আনন্দের পাশে যেমন বেদনা। এক বছর পর কোন বেদনা আপনাকে বেশি পোড়ায়?
আজমেরী হক বাঁধন-যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য বেদনাই প্রবল। গাড়ি থেকে ফেলে দিচ্ছে, পোড়াচ্ছে কিংবা গাড়ি তুলে দিচ্ছে মানুষের উপর। সামনা সামনি কিংবা হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করেছে। কথায় আছে না যার যায় সেই বোঝে? যারা আহত হয়েছেন,যাদের অঙ্গহানি হয়েছে কী যে বেদনা নিয়ে তারা বেঁচে আছেন। কোনো বেদনাই আসলে স্পর্শ করা যায় না। নানা পেশার মানুষ বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসবও বেদনার অংশ।
বৈশাখী অনলাইন-‘যা পেয়েছি কেন তা চাই নি, যা চেয়েছি কেন তা পাই নি?’ চাওয়া না পাওয়ার কোন তালিকা দীর্ঘ?
আজমেরী হক বাঁধন-সাধারণ মানুষের চাওয়ার তালিকা দীর্ঘই হবে। আমি চেয়েছি সাম্য.সম্প্রীতি,ন্যায়বিচার , মানবিক আর বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। ধর্ম বর্ন গোত্র নির্বিশেষে সবার জন্য সমান বাংলাদেশ। জুলাই ছিল স্বাধীনতার পর আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ। সুযোগ পেয়েও এই সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ আমি দেখতে পাই নি!
বৈশাখী অনলাইন-জুলাইর অভ্যুত্থানে অংশ নেয়ার কারণে অনেকেই অনেক দায়িত্ব পেয়েছেন, সুবিধা নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের সাথে থাকার কারণে আপনি সর্বোচ্চ ট্রলের শিকার হয়েছেন।
আাজমেরী হক বাঁধন-সুবিধা নিয়েছেন শব্দটা আমি বলবো না। এই সরকারের অনেকেই আমাকে দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। অনেক সম্মান দিয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগ আমলেও আমাকে বলা হয়েছিল। আমি কোনো আমলেই সুযোগ বা দায়িত্ব নিতে চাই নি। এটা আমার সচেতন সিদ্ধান্ত। দায়িত্ব খুব বড় একটা ব্যাপার। সেটা সামাল দেয়ার ক্যাপাবিলিটি আমার নাও থাকতে পারে। একসময় ভাবতাম আমি রাজনীতি করবো। পরে আমার এই বোধ হয়েছে যে ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে নিজের মতো থাকাই ভালো। আমি গর্বিত যে এই বোধ আমার হয়েছে এবং আমি নিজের মতো থাকতে পেরেছি।
বৈশাখী অনলাইন –আপনার ক্যারিয়ারে কী এর প্রভাব পড়ে নি?
আজমেরী হক বাঁধন-অবশ্যই পড়েছে। তিনটা ছবি করার কথা ছিল। টাকা লগ্নি যাদের করার কথা তারা সবাই ছিলেন আওয়ামী ঘরানার। তারা দৃশ্যমান নন এবং কোনো যোগাযোগও আর করেন নি। ইন্ডিয়ান একটা পন্যের বিজ্ঞাপন করার কথা ছিল। সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্ত পরিবর্তিত সময়ে মার্কেট সার্ভের নামে আমাকে জানানো হলো বাংলাদেশের মানুষ নাকি আমাকে চেনে না। এটা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি হাসির খোরাক। কাজটা আর করা হয় নি। আমার কাজের অবস্থা বা নতুন যারা কাজ করছেন, কারো জন্যই অবস্থা ভালো না। বাবার সাথে থাকি তাই সারভাইভ করতে পারছি। সামনে দুটো সিনেমা মুক্তি পাবে। দুটো সিনেমাতেই আমি সাপোর্টিং রোল করেছি, মূল চরিত্র করি নি। আমি তবু আশাবাদী।
বৈশাখী অনলাইন-দেশের কী অবস্থা? নির্বাচন নিয়ে সংশয়। অনেকটা দম বন্ধ করা অবস্থা। জুলাই জাগরণ শেষমেষ দীর্ঘশ্বাস হয়ে যাবে না তো?
আজমেরী হক বাঁধন-না, কখনোই দীর্ঘশ্বাস হবে না। ২০২৪ এ বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাওয়াটাই ছিল গণ-অভ্যুত্থান। নির্বাচন তো মানুষের দীর্ধদিনের চাওয়া। সুষ্ঠু নির্বাচন হতেই হতো এবং আমি মনে করি হবেও। নতুন দল হয়েছে তারাও আসুক। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া যা আগে পরে বজায় থাকবে। আমি বা আমরা যে সাম্য ও মানবিক বাংলাদেশ চাই,ধর্মীয় সম্প্রীতি ও বিচার পাওয়ার যে কাঙ্খিত বাংলাদেশ, নারী বান্ধব যে বাংলাদেশ সেটা চাওয়া ও আদায় করার যে প্রক্রিয়া সেটাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। রাজপথ যে একবার চেনে তাকে আর এই পথ থেকে কেউ ফেরাতে পারে না!
মন্তব্য করুন