
		জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মনির খানকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। বৈশাখী অনলাইনের প্রশ্নের উত্তরে শিল্পী মনির খান যা বললেন-
বৈশাখী অনলাইন-আজম খানের ‘পাপড়ি’, অঞ্জন দত্তের ‘বেলা বোস’ এর মতো আপনার ‘অঞ্জনা’ কে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। ‘অঞ্জনা’ শিরোনামে আপনার কতগুলো গান আছে?
মনির খান-শেষ প্রশ্নের উত্তর আগে দেই। শুধু একটা নয়,অঞ্জনাকে নিয়ে এ পর্যন্ত ৪৩ টি গান করেছি। অঞ্জনা পুরোটাই গান কেন্দ্রিক চরিত্র। শ্রোতারা জানেন ও বোঝেন যে অঞ্জনার বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। কবি বা গায়কদের এমন প্রিয় চরিত্র আছে বা থাকে। ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতায় লুসি যেমন আছে,রবীন্দ্রনাথের লাবন্য,জীবনানন্দের যেমন বনলতা সেন, সুনীলের তেমন নীরা। গানেও তেমন আছে। যেমন ‘সুজানা আাই অ্যাম ক্রেজি লাভিং ইউ’ বা ‘মনে পড়ে রুবী রায়’। আমার অঞ্জনা চলমান,একটাতেই শেষ না।
বৈশাখী অনলাইন- সম্প্রতি ছবির গান করেছেন। কতদিন পরে প্লে-ব্যাক করলেন? গানের স্থায়িত্ব বা আবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগের মতো হৃদয়ে আলোড়ন তোলে না।
মনির খান-চলচ্চিত্রের গান গেয়েছি একমাস পরে। একথা সত্য যে সিনেমা ও গানের সংখ্যা কমে গেছে। আগে গাইতেন আমার সিনিয়ররা,পরে আমরা এলাম। এখন নতুন শিল্পীরা এসেছেন। এই ধারাবাহিকতা চলবেই। তবে গানের স্থায়িত্ব বা আবেদন নিয়ে আমরা অনেক দিন ধরেই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। আগে অডিও বা সিনেমার গানের সব দিকে কড়া নজর ছিল । গানের কথা নিয়ে আলোচনা হতো। এরপর সুর নিয়ে আলোচনা ও গায়কীর পরীক্ষা শুরু হতো যেন। বার বার এটা করা হতো যেন গানটা ভালো হয়। দশ পনের দিন লেগে যেত একটা গান তৈরিতে। এখানে তাড়াহুড়া ছিল না, সৃষ্টিশীলতাই মুখ্য ছিল। ভিউ বা ভাইরাল হবার প্রতিযোগিতা ছিল না। এখন ভালো গান মন্দ গানের চিন্তা নেই আছে অল্প সময়ে সবাইকে ছাড়িয়ে যাবার অসৃষ্টিশীল প্রতিযোগিতা। ভিউ বানিজ্য,তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠা পাবার বাসনা,সময়ের দাবী মিটানোর অস্থির প্রতিযোগিতা ভালো গান তৈরির অন্তরায়। তবুও তো ভালো গান হচ্ছে। সবাই মিলে এই পরিবেশ বদলে দিতে পারবো এই আশা এখনও আমার আছে।
বৈশাখী অনলাইন-গত সরকারের আমলে গানের জগত থেকে একরকম দূরে থাকতেই বাধ্য হয়েছিলেন। আপনার কখনো কী মনে হয় শিল্পীদের রাজনীতি করা উচিত না?
মনির খান-রাজনীতি করা যাবে না কেন? রাজনীতি বা গান দুটোই তো মানুষের জন্য। এ কথায় পরে আসছি। গত আমলে বেশিরভাগ টেলিভিশন চ্যানেল থেকে ডাক পাই নি। পাবলিক প্লেস বা ওপেন এয়ার কনসার্টে গাওয়া এমন কী বিদেশে যেতেও বাধার সৃষ্টি করা হতো। আপনারা জানেন যে আমি ‘জাসাস’ এর (জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা) এর জেনারেল সেক্রেটারি ছিলাম। বিএনপির কেন্দ্রীয কমিটির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। আমার উপর একারণে তারা বিরূপ এবং নাখোশ ছিলেন।
রাজনীতি একটা ২৪ ঘন্টার পেশা। নিজ এলাকা থেকে দলের কেন্দ্র পর্যন্ত অনেক দায়িত্ব পালন করয়ে হয় যা আমি করেছিও। মানুষের জন্য অনেক কাজ করতে হয়। হয়তো তখন গানের কাজ খানিক ব্যহত হয়। আমি মানুষের জন্য যদি গানই গাইতে পারি তাহলে রাজনীতি করতে পারবো না কেন? রাজনীতি করা কেন অপরাধ বা অন্যায় হবে? রাজনীতিও জনগণের জন্য গানও তাই। তবে রাজনীতির উপর মহলে যারা থাকেন তাদের উচিত মিলে মিশে সবার জন্য একটা দেশ গড়া যেটা সংস্কতির মেলবন্ধনেরও কাজ করবে।
বৈশাখী অনলাইন- গত একবছরে কেমন ছিলেন আপনি? কেমন ছিল বাংলাদেশ?
মনির খান-জুলাই জাগরন বা অভ্যুত্থানের পর কেমন আছি আমি আপনি সবাই তা জানি।সুস্থ বা ভালো আছি কি না তার চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আমরা সারাদেশে এখন অনুষ্ঠান করতে পারছি। সবচেয়ে ভালো যেটা সেটা হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। মন খুলে কথা বলতে পারছি।
বৈশাখী অনলাইন-জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এখন যে অবস্থা তাতে নির্বাচন নিয়েই শংকা আছে। আপনার কী মনে হয়?
মনির খান-আমি আশাবাদী। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, বিএনপি সহ সব দলের আন্দোলনের কারণেই শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। ড.ইুউনুস সাহেব যখন ইংল্যান্ড যান, তারুন্যের অহংকার, আমাদের নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শ্রদ্ধেয় তারেক রহমানের সাথে তার একান্তে বৈঠক হয়েছে। ইউনুস সাহেব নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমি মনে করি নিদিষ্ট সময়ে নির্বাচন হবে এবং দেশ একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। কবিতায় আছে না –‘দুঃসময় থেকে সুসময়ে, মানুষ পৌঁছে দেবে মানুষকে? আমরা একটু ধৈর্য্য নিয়ে যেন নির্বাচন ও শান্তির জন্য অপেক্ষা করি।
মন্তব্য করুন