
		বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান শিল্পী আবিদা সুলতানা। অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের শিল্পী তিনি। বিশেষ করে অডিও কিংবা চলচ্চিত্র দুই ভুবনেই তিনি সফলতা পেয়েছেন। পেয়েছেন শ্রোতাদের ভালোবাসা। আজ এই শিল্পীর জন্মদিন।
আবিদা সুলতানার জন্ম পঞ্চগড়ে। সংস্কৃতি পরিবারে জন্ম ও বড় হওয়ার সুবাদে তিনিও এই জগতের একজন হয়ে ওঠেন। ছোট বেলায় গানের চেয়ে নাচের দিকেই বেশি আগ্রহ ছিল তার। তবে শেষ পর্যন্ত গানের মানুষ হয়েই তিনি জয় করেছেন সবার মন। বাবু রাম গোপাল মহন্ত, ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ, আক্তার সাদমানি, বারীন মজুমদার, ওস্তাদ নারু এবং ওস্তাদ সগীরউদ্দীন খান থেকে গানের তালিম নিয়েছেন আবিদা সুলতানা। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীতের ওপর তালিম নিলেও তিনি আধুনিক গানেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভূক্ত শিল্পী হন আবিদা সুলতানা।
চলচ্চিত্রের গানে তাকে প্রথম পাওয়া যায় ১৯৭৪ সালে। সেই থেকে তিনি অন্তত সাড়ে ৪০০ সিনেমায় গান করেছেন। আবিদা সুলতানার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার, মৌনতার সুতোয় বোনা একটি রঙিন চাদর’, 'একটা দোলনা যদি', 'হৃদয়ের অচেনা দুটি নদী', 'হারজিত চিরদিন থাকবে', 'হাতে থাক দুটি হাত', 'মধুচন্দ্রিমার এই রাত', 'আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী', 'এ কী বাঁধনে বল', 'আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে', 'রঙিলা পাখিরে', 'আমি জ্যোতিষীর কাছে যাব' প্রভৃতি। ব্যক্তিগত জীবনে আবিদা সুলতানা বিবাহিত এবং এক সন্তানের জননী। তার স্বামী বাংলাদেশের আরেক বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী রফিকুল আলম। ১৯৭৫ সালে তারা ভালোবেসে বিয়ে করেন।
এদিকে জন্মদিন উপলক্ষে আবিদা সুলতানাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন দেশের বিশিষ্ট গীতিকার সুরকার সঙ্গীত পরিচালক মিল্টন খন্দকার। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেছেন ‘রাত পৌনে ৩টা। রোজার মাস। ঈদের কাজ করছি নাইট শিফটে। হঠাৎ আবিদা আপার ফোন!--কী করছিস ভাই ? বললাম...। ও তাহলে তো তুই খুবই ব্যস্ত! আমি বললাম, কিছু কী বলবেন আপা?
অপরাধীর ভঙ্গিতে বললো, তুই আমাকে একটু সুযোগ দিবি ভাই? আমি বললাম, কিসের? তারপর আপা যা বললো, তা শুনে আমি তাজ্জব! আবিদা আপা আর রফিক ভাইয়ের অ্যালবাম করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। আপার যেদিন ভয়েস নিই--সেদিনই আপা খুঁতখুঁত করছিল। বারবার বলছিল--একজায়গায় উচ্চারণটা ঠিক হয়নি। তিনি আবার গেয়ে সঠিক করতে চান! বললাম, এখন ছাড়া আমার তো আর স্টুডিও বুকিং নেই? এখন আসতে পারবেন? --রাত পৌনে চারটায় আপা এসে হাজির! বললেন, সেহরি খেয়েছি, আজান পড়ার আগে আগে আরেক গ্লাস পানি খাবোরে। সেই রাতে--সেই উচ্চারণ সঠিক করে পরম শান্তি নিয়ে আবিদা সুলতানা ফিরে গেলেন গৃহে। আমি বলেছিলাম, আপা--এই টুকুর জন্যে এতো রাতে এসে-- এতো কষ্ট করলেন? এই ভুল তো শষ্য পরিমাণ ভুল-- কেউ ধরতেই পারতো না!
আপার উত্তর, আমি পারতাম। আর সারাজীবন আমার বুকের ভেতর খচখচ করতো! আবিদা আপাকে সেদিন নতুন করে চিনলাম।  আগেকার গান এতো সমৃদ্ধ হতো কী করে জানলাম। বুঝলাম, গানের প্রতি নিবেদিত না হলে, বুকের ভেতর খচখচানি না থাকলে, ভবিষ্যতে রুনা- সাবিনা-আবিদা--জন্ম নেবার প্রশ্নই ওঠেনা। বিশেষ করে কপি,পেস্ট, অটো টিউনের যুগে। আজ আবিদা সুলতানার জন্মদিন। আজ আমার আপার জন্মদিন। দেখা হওয়া মাত্র পা ছুঁয়ে সালাম করতে চাই। বলতে চাই `শুভ জন্মদিন আপা। আপনার যতোদিন খুশি-- আপনি বেঁচে থাকুন। ইচ্ছে মতো'।
                    
মন্তব্য করুন