
		বাংলাদেশের বরেণ্য অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যকার ও নাট্যশিক্ষক সৈয়দ মহিদুল ইসলামের ২৩তম প্রয়াণ দিবস আজ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চনাটকে প্রথম সারির একজন মহিদুল ইসলাম।তিনি ১৯৪৬ সালের ১ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের সৈয়দ মহল্লা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ পাশ করেন। একই বছর রাওয়াল পিন্ডিতে টিভি প্রযোজনার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
ভারতের দিল্লির 'ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা' থেকে নাট্যতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন মহিদুল ইসলাম। ১৯৭৬ সালে ভারতের কোলকাতায় 'ব্যতিক্রম' নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে 'ব্যতিক্রম' নাট্য গোষ্ঠীর নিয়মিত নাট্যচর্চা অব্যাহত রাখেন। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'স্কুল অব অ্যাকটিং' নামে একটি অভিনয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মৃত্যু পর্যন্ত এর পরিচালক ও মুখ্য প্রশিক্ষক ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে মঞ্চ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অনেক কর্মী কাজ করে যাচ্ছেন। 'ব্যতিক্রম' নাট্য গোষ্ঠীর প্রযোজনায় তিনি ৩৩টি নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
মঞ্চের পাশাপাশি বেতার ও টেলিভিশনের অসংখ্য নাটকের অভিনয় ও পান্ডুলিপি রচনা করেন মহিদুল ইসলাম। 'আমি কার' ও 'স্বপ্নযাত্রা' নামে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এছাড়া চলচ্চিত্রে অভিনয়েও ছিল তার উজ্জ্বল উপস্থিতি। তার রচিত অভিনয় শিক্ষার বিশ্লেষণ ভিত্তিক গ্রন্থ 'অভিনয়'। প্রায় ১১টি নাটক ও লেখা অনুবাদ ও রূপান্তর করেছেন এদেশের দর্শকের জন্য।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চনাটকে প্রথম সারির একজন সৈয়দ মহিদুল ইসলাম। গাইড হাউস মিলনায়তন, মহিলা সমিতির মঞ্চে সৈয়দ মহিদুল ইসলামের অভিনয় দেখেছে বহু মানুষ। শিক্ষক হিসেবেও সুনাম ছিল তাঁর। অল্প কথায় সহজে বুঝিয়ে দিতেন কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে। অনেক চলচ্চিত্র পরিচালক মহিদুলের কাছে নিয়ে যেতেন তাঁদের ছবির নায়ক-নায়িকাদের প্রস্তুত করে দেওয়ার জন্য।
গুণী এই মানুষের গড়া নাট্যদল ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠী। নাট্যকার সৈয়দ মহিদুল ইসলাম নির্দেশিত ‘পিছু ডাক’ নাটকটি অন্যতম। এনএসডিতে নাট্যতত্ত্বে অধ্যায়নকালে সৈয়দ মহিদুল ইসলাম সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলেন রাজ বাব্বর, স্মিতা পাতিল, নাসিরউদ্দিন শাহকে। তাঁর সেই পড়াশোনা ঢাকার নাটককে সমৃদ্ধ করতে কাজে দিয়েছিল।
অভিনয় শিখে ঢাকার ছেলেমেয়েরা অভিনয়শিল্পী হবে, এই ছিল তাঁর স্বপ্ন। তিনি নিজে লিখতেন, বিদেশি নাটক অনুবাদ করতেন, নির্দেশনা দিতেন, স্টেজ সাজাতেন। তাঁর নাটকে বড় জাঁকজমক সেট থাকত না, অভিনয়টাই সেখানে গুরুত্ব পেত। মঞ্চের পাশাপাশি নিজে অভিনয় করেছেন টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে। এমনকি চলচ্চিত্র নির্মাণও করেছেন তিনি। তাঁর নির্মিত সিনেমা দুটি হলো ‘আমি কার’ ও ‘স্বপ্নযাত্রা’। ২০০২ সালের ২৩ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন সৈয়দ মহিদুল ইসলাম। সৈয়দ মহিদুল ইসলাম নেই, তবে তিনি বেঁচে আছেন তার কর্মে।
মন্তব্য করুন