
		তামিল রাজনীতিতে রুপালি পর্দার সুপারস্টারদের আধিপত্য নতুন ঘটনা নয়। এনটি রামা রাও থেকে শুরু করে জয়ললিতা, কমল হাসান এমনকি হালের থালাপতি বিজয়, প্রায় সকলেই নিজস্ব স্টাইলে ভোটারদের মন জয় করেছেন। এবার সেই লক্ষ্যে আরেকটু এগোলেন সুপারস্টার বিজয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপিকে ‘ফ্যাসিবাদী বিজেপি’ আখ্যা দিয়ে এই আদর্শগত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন দক্ষিণী এই সুপারস্টার। আর এ বার্তার মধ্য দিয়ে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিলেন এই অভিনেতা ও রাজনীতিক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১ আগস্ট বৃহস্পতিবার মাদুরাইয়ের পারাপাথিতে তার দল তামিলাগা ভেটরি কাজাগাম টিভিকে’র দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলনে হাজার হাজার সমর্থক জড়ো হয়। সেখানেই বিজয় ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে ‘একলা চলো’ নীতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। শুধু নিজে লড়ার ঘোষণাই নয় পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচনে কোনও জোটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। সমাবেশে বিজয় বিজেপিকে ‘আদর্শগত শত্রু’ এবং ক্ষমতাসীন ডিএমকে-কে ‘একমাত্র রাজনৈতিক শত্রু’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এ সময় বিজেপির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিনেতা বিজয় বলেন আমাদের একমাত্র আদর্শগত শত্রু বিজেপি। আর আমাদের রাজনৈতিক শত্রু হলো ডিএমকে দ্রাবিড় মুনেত্র কাজাগাম। তামিলাগা ভেটরি কাজাগাম-টিভিকে এমন কোনো দল নয়, যারা কাউকে ভয় পায় বা কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড মাফিয়া ব্যবসা চালায়। পুরো তামিলনাড়ুর শক্তি আমাদের সঙ্গে আছে। চলুন, আমরা ফ্যাসিবাদী বিজেপি ও বিষাক্ত ডিএমকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি।
থালাপতি বিজয় আরও বলেন, সিংহ সব সময়ই সিংহ।একবার গর্জন করলে সেই শব্দ আট কিলোমিটার পর্যন্ত কম্পন সৃষ্টি করে। এমন সিংহ শিকার করতে বের হয়। জঙ্গলে অনেক শিয়াল থাকে, কিন্তু সিংহ থাকে মাত্র একটি। সিংহই জঙ্গলের রাজা। সিংহ জানে কী করে টিকে থাকতে হয়। মোদির সমালোচনা করে বিজয় বলেন, আপনারা হয়তো ভাবছেন ২০২৯ সাল পর্যন্ত আপনাদের যাত্রা মসৃণ হবে। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলছি, পদ্মপাতায় যেমন জল আটকে থাকে না, তেমনি তামিলরাও বিজেপির সঙ্গে থাকবে না।
থালাপতি বিজয় সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়ে ঘোষণা করলেন-এ লড়াই আর শুধু রাজনীতির লড়াই নয়, বরং আদর্শের যুদ্ধ। বিজয়ের ভাষায়, বিজেপি একদিকে ধর্মকে ব্যবহার করছে বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে, অন্যদিকে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে বিজেপি তার কাছে সবচেয়ে বড় আদর্শগত শত্রু।সংবাদসংস্থা পিটিআই, এএনআই, এনটিভি থেকে শুরু করে হিন্দুস্তান টাইমস ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসবাই প্রথম সারিতে বিজয়ের এই বক্তব্যকে তুলে ধরেছে। তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, বিজেপির পাশাপাশি বিজয় ডিএমকে-কে রাজনৈতিক শত্রু হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, ডিএমকের সঙ্গে তার লড়াই রাজনীতির ময়দানে সীমাবদ্ধ, কিন্তু বিজেপির সঙ্গে সংঘাত একেবারে আদর্শিক স্তরে। তার দলের নীতি—সমাজে সমতা, মুক্তচিন্তা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার—যা বিজেপির ধ্যানধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, থালাপতি বিজয় নিজের দলকে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে তৃতীয় ফ্রন্ট হিসেবে তুলে আনার চেষ্টা করছেন। রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা দ্রাবিড় মুনেত্র কাজাগাম - ডিএমকে এবং বিরোধী এআইএডিএমকে দুই দলেরই বিকল্প হিসেবে নিজের দলকে ভোটারদের সামনে আনার চেষ্টায় রয়েছেন বিজয়।
২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বিজয়ের দল তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে দ্রুত পা জমিয়েছে। কোটি কোটি তরুণের সমর্থন তার সঙ্গে। মাদুরাইয়ের সভায় তিনি যে স্পষ্ট ও কঠোর ভাষায় কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করলেন, তা মুহূর্তেই সাড়া ফেলে দিয়েছে রাজনীতির মাঠে। সভায় উপস্থিত ভক্ত-সমর্থকদের করতালি আর উল্লাসে বক্তৃতার প্রতিটি বাক্য যেন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, বিজয়ের এই মন্তব্য জাতীয় রাজনীতিতে আলোড়ন তুলতে বাধ্য।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলেছে, একজন তারকা-রাজনীতিকের মুখে ‘ফ্যাসিবাদী বিজেপি’র মতো শব্দ শুধু শিরোনামই নয়, বিতর্ককেও উস্কে দেবে। যদিও বিজেপি বা অন্য প্রধান দলগুলোর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, কিন্তু রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত-এই বক্তব্য দক্ষিণ ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। মাদুরাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজয় ঘোষণা করেছেন আমরা নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারি না। ফ্যাসিবাদী বিজেপির বিরুদ্ধে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। তার এই দৃঢ় ঘোষণা শুধু একটি বক্তৃতা নয়, বরং আসন্ন সময়ের ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন লড়াইয়ের সূচনা।
প্রসঙ্গত, গত বছর তামিলাগা ভেটরি কাজাগাম-টিভিকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন দক্ষিণী সিনেমার এই সুপারস্টার। এবারই তিনি প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নেবেন। তামিলনাড়ুতে বিধানসভা নির্বাচন ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
মন্তব্য করুন