
		পড়াশোনা থেকে শুরু করে অফিসের কাজ, ফেসবুকের ক্যাপশন ঠিক করা থেকে শুরু করে রিসার্চ পেপার তৈরির কাজ— যা-ই হোক না কেন, সবার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে চ্যাটজিপিটি। এখন শুধু প্রশ্নের উত্তর দেওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, গবেষণা থেকে শুরু করে সব তথ্যও পাওয়া যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক এই রোবটের কাছে।
কিন্তু জীবনযাপন সহজ করে দিলেও এর রয়েছে অনেক ঝুঁকি। আধুনিক যুগে তথ্যই হলো বড় সম্পদ। আর এই তথ্য অসবাধনতাবশত ভুল কারও কাছে চলে গেলে আপনার ক্ষতি হতে পারে। তাই জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে, যেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবটের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়।
বিস্ফোরক তৈরির পদ্ধতি: কেবল কৌতূহলের বশেই হোক বা মজার ছলে, কেউ যদি চ্যাটজিপিটির কাছে জানতে চান কীভাবে বিস্ফোরক তৈরি করা যায়, তা মারাত্মক ভুল হবে। এই ধরনের প্রশ্ন অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা নীতির লঙ্ঘন। এতে ব্যবহারকারীর অ্যাকসেস সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কাউকে হত্যার উপায় জিজ্ঞেস করা: চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞেস করা এমন প্রশ্নের তালিকায় এটি সবচেয়ে ভয়ানক। এটি শুধু এআই ব্যবহার নীতির লঙ্ঘন নয়, বরং সরাসরি অপরাধপ্রবণ মানসিকতার ইঙ্গিত দেয়। আত্মনাশ বা বিপজ্জনক পরামর্শ চাইলে চ্যাটজিপিটি এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেবে না এবং ব্যবহারকারীর আচরণ নজরদারির আওতায় পড়ে যেতে পারে।
অবৈধভাবে ডাউনলোড করার লিংক: সিনেমা, গেম, সফটওয়্যার অবৈধভাবে ডাউনলোড করার লিংক, পেইড কনটেন্ট ফ্রি করে দেওয়ার উপায়, অশ্লীল বা আপত্তিকর যৌন কন্টেন্ট যা নীতি লঙ্ঘন করে, এমন বিষয়ে জানতে চাওয়া যাবেনা।
ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ তথ্য: ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ তথ্য হলো এমন যেকোনো তথ্য, যা কারও পরিচয় স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে। যেমন- ব্যবহারকারীর নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল অ্যাড্রেস ইত্যাদি। চ্যাটবটগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে এসব তথ্য সংরক্ষণ না করলেও তথ্য ফাঁসের মতো ঘটনায় এর ঝুঁকি থেকেই যায়।
ব্যাংকিং তথ্য: নিজের ক্রেডিট কার্ড নম্বর বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি, মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য চ্যাটজিপিটির মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করাটা বেশ বিপজ্জনক। এ ধরনের তথ্য ফাঁস হলে অসাধু লোকেরা এসব তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংক জালিয়াতি করে আপনার ব্যাংক হিসাবের অর্থ খালি করে দিতে পারে।
যেকোনো পাসওয়ার্ড: চ্যাটবটকে এ ধরনের তথ্য দিলে তা হ্যাক বা অবৈধ প্রবেশের জন্য সুযোগ করে দেয়। তাই প্রতিটি অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখাও বাঞ্ছনীয়।
গোপনীয় তথ্য: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক এই চ্যাটবটগুলো মানুষের মতো বিবেক দিয়ে কিছু চিন্তা করে না বা প্রেক্ষাপট বোঝে না। ফলে গোপন বা ব্যক্তিগত তথ্য এআইয়ে ব্যবহার করলে তা অনিচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি: বর্তমানে চ্যাটজিপিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই নিজের উদ্ভাবনী ধারণা, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, কোডিং বা ডিজাইন, আর্টওয়ার্কের মতো মেধাসম্পদ চ্যাটজিপিটির সঙ্গে শেয়ার করেন। পরে এসব তথ্য এআই সংরক্ষিত ডেটা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এমনকি অন্যের কাছেও তা পৌঁছে যেতে পারে। তাই নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত কোনো ধরনের উদ্ভাবনী ধারণা বা পরিকল্পনা অথবা স্বত্বাধিকারযুক্ত কনটেন্ট এআই চ্যাটবটকে না দেওয়াই ভালো।
চ্যাটজিপিটি সব ব্যবহারকারীর চ্যাট হিস্ট্রি সংরক্ষণ করে। এটি নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণের অংশ। কেউ যদি অপরাধপ্রবণ বা অনৈতিক কোনো প্রশ্ন করেন, ভবিষ্যতে সেটি তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে তুললেও, এর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রত্যেক ব্যবহারকারীর দায়িত্ব। বিনোদন বা কৌতূহলের বশে কোনো ভুল প্রশ্ন যেন ‘মজা’ থেকে ‘সাজা’য় পরিণত না হয়—সে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।
মন্তব্য করুন