মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

জার বোম্বা: এক বিস্ফোরণেই তিনবার কেঁপেছিল পৃথিবী

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ০১:০০ পিএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ০১:১৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পারমাণবিক অস্ত্রের কথা উঠলেই সবার আগে হিরোশিমা আর নাগাসাকির বিভীষিকাময় দৃশ্য মনে পড়ে। তবে অনেকেই জানেন না, সেই ভয়ঙ্করতার চেয়েও বহু গুণ বেশি ধ্বংসাত্মক এক বোমা তৈরি করেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, যা ‘জার বোম্বা’ (Tsar Bomba) নামে পরিচিত। এটি এমন এক অস্ত্র, যা যদি কখনও যুদ্ধে ব্যবহার করা হতো, তাহলে হিরোশিমা-নাগাসাকির ট্র্যাজেডি হয়তো মানুষ ভুলেই যেত।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা হিসেবে পরিচিত জার বোম্বার প্রকৃত নাম ছিল ‘এএন602 হাইড্রোজেন বোম্ব’। এটি এক ধরনের থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র বা হাইড্রোজেন বোমা, যা ফিশন ও ফিউশন উভয় প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন করে। বোমাটি ১৯৫৩ সালে তৈরি শুরু হয় এবং ১৯৬১ সালের ৩০ অক্টোবর আর্কটিক মহাসাগরের নোভায়া জেমলিয়া দ্বীপপুঞ্জে পরীক্ষামূলকভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

জার বোমার ওজন ছিল প্রায় ২৭ টন এবং এর বিস্ফোরণ ক্ষমতা ছিল ৫০ মেগাটন টিএনটি সমতুল্য, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমার চেয়ে প্রায় ৩,৩৩৩ গুণ বেশি শক্তিশালী। এটি তিন স্তরবিশিষ্ট হাইড্রোজেন বোমা, যা বিস্ফোরণের পর প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় মাশরুমের আকৃতির মেঘ তৈরি করেছিল।

ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৪ কিলোমিটার উপরে বিস্ফোরিত হলেও, জার বোমার শকওয়েভের তীব্রতায় ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এমনকি, বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট কম্পন তিনবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছিল। বোমার আলো ১,০০০ কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা গিয়েছিল এবং প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত মানুষের তৃতীয় ডিগ্রির পোড়া লাগার ঝুঁকি ছিল।

বোমাটি বিমান থেকে ফেলার সময় বড় ধরনের ঝুঁকি ছিল, কারণ বিস্ফোরণের শক্তির তাপে এবং শকওয়েভের কারণে বহনকারী বিমানও ধ্বংসের মুখে পড়তে পারত, যদি সেটি যথেষ্ট দ্রুত এলাকা ত্যাগ করতে না পারত।

তবে জার বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক সক্ষমতা প্রদর্শন করা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে নিরুৎসাহিত করা। বিশাল আকার ও ওজনের কারণে এই বোমা বাস্তবে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন মাত্র দুটি জার বোমা তৈরি করেছিল, যা এখনও রাশিয়ার হেফাজতেই রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের সুপারবোমা মানবসভ্যতার জন্য এক ভয়ঙ্কর বার্তা—যুদ্ধ যে কতটা সীমাহীনভাবে ধ্বংস ডেকে আনতে পারে, জার বোমা তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
যে কারণে প্রশংসায় ভাসছেন কেবিন ক্রু
যে কারণে প্রশংসায় ভাসছেন কেবিন ক্রু
সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি আর নেই
সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি আর নেই
নেপালে তুষারঝড়-ধসে ৯ পর্বতারোহী নিহত
নেপালে তুষারঝড়-ধসে ৯ পর্বতারোহী নিহত
যে অভিযোগে গ্রেপ্তার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ আইনজীবী
যে অভিযোগে গ্রেপ্তার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ আইনজীবী