মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত সিরিয়া ও ইসরাইল!

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৩ এএম
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৪ এএম

ইসরাইল ও সিরিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তুরস্কে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত টম ব্যারাকএ তথ্য জানিয়েছেন । স্থানীয় সময় ১৮ জুলাই শুক্রবার এক্সে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে তিনি এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ব্যারাক জানান, এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে তুরস্ক, জর্ডান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলো। খবর সিএনএনের।

এ চুক্তিকে বলা হচ্ছে একটি কূটনৈতিক মাইলফলক, যা মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিভাজন নিরসনের লক্ষ্যে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের দূত ব্যারাক বলেন, আমরা ড্রুজ, বেদুইন এবং সুন্নি সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি-আপনারা অস্ত্র নামিয়ে রাখুন এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সঙ্গে একত্রে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে একটি নতুন এবং ঐক্যবদ্ধ সিরিয়া গড়ে তুলুন।

ইসরাইল গত বুধবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বিমান হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল সরকারি স্থাপনাসমূহ। দখলদারদের দাবি করে, তারা এই হামলা চালিয়েছে ড্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে, যারা আরব ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় বসবাস করছে।

সিরিয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর অঞ্চলটিতে নতুন ক্ষমতাকাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার ফলে সরকারপন্থি বাহিনী ও ড্রুজদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে এ পর্যন্ত দশকের পর দশক ধরে চাপা থাকা জাতিগত বিভাজন আবারও সামনে চলে এসেছে।

বুধবারের ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে সিরিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দামেস্কে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভবনে আঘাত হানার একটি মুহূর্ত সরাসরি সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, যেখানে স্টুডিওতে থাকা উপস্থাপক হামলার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে নিচু হয়ে যান।

সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বুধবার রাতের এক জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেন, সরকারি বাহিনী সুয়েইদা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে। উল্লেখ্য, এই অঞ্চলে সপ্তাহান্তে ড্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়, যার মধ্যে হস্তক্ষেপ করতে গিয়েই সরকারি বাহিনীর সঙ্গে ড্রুজদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

শারা সরকার ড্রুজ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পৃথক একটি যুদ্ধবিরতিতেও সম্মত হয়েছে, যা বোঝায় যে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাতও ধীরে ধীরে সংলাপের দিকে এগোচ্ছে। তবে একই ভাষণে শারা অভিযোগ করেন, ইসরাইল আমাদের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায় এবং সিরিয়াকে একটি অস্থির যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়।

গাজায় নতুন কৌশলে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল : যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে এসে নতুন পরিকল্পনা ও পদ্ধতিতে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে ইসরাইল। গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার ভবন গুঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে দখলদার বাহিনী। গত কয়েক সপ্তাহে গাজার বিভিন্ন স্থানে পুরো শহর ও শহরতলির এলাকা ধ্বংস করেছে ইসরাইল। এসব এলাকায় একসময় বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস ছিল। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, ইসরাইলের সামরিক কমান্ডের নিয়ন্ত্রণে উপত্যকার বেশ কয়েকটি এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে।

শুক্রবার বিবিসির বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, গাজায় যেসব ভবন ধ্বংস করা হচ্ছে, তার একটি বড় অংশই পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন তো আছেই, সেই সঙ্গে অক্ষত ভবনও রয়েছে। ফুটেজ যাচাই করে দেখা যায়, ইসরাইলের বাহিনী টাওয়ার ব্লক, স্কুল ও অন্যান্য অবকাঠামোতে নিয়ন্ত্রিত ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।

এটাকে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। একাধিক আইন বিশেষজ্ঞ বিবিসি ভেরিফাইকে বলেন, জেনেভা কনভেনশনের অধীনে ইসরাইল সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ করেছে। ওই নীতিমালা দখলদার শক্তিকে অবকাঠামো ধ্বংসের অনুমোদন দেয় না। তবে ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক মুখপাত্র বলেন, তারা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে কাজ করছেন। হামাস বেসামরিক এলাকায় ‘সামরিক জিনিসপত্র’ লুকিয়ে রেখেছে।

চলতি জুলাইয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ গাজার রাফাহ শহরের ধ্বংসাবশেষে একটি ‘মানবিক শহর’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন। কথিত ওই মানবিক শহরে প্রাথমিকভাবে ছয় লাখ ফিলিস্তিনিকে আটকে রাখা হবে। বিশ্বব্যাপী এ পরিকল্পনার নিন্দা করা হয়েছে। ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বিবিসিকে বলেন, এটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতোই হবে।

মিসরের সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরের অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এলাকা ছিল তেল আল-সুলতান। এর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গাজার একমাত্র বিশেষায়িত প্রসূতি হাসপাতালের অবস্থান। ওই এলাকায় ছিল অনাথ শিশুদের যত্ন নেওয়ার একটি জায়গাও।

স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, ইসরাইলের বোমা হামলা ও কামানের গোলায় ইতোমধ্যে এলাকার বেশির ভাগ অংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত কয়েক দিনে ধ্বংসযজ্ঞ আরও বেড়ে যায়। নির্বিচারে ভবনগুলোতে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুরো ব্লকটিকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে হাসপাতালসহ হাতেগোনা কয়েকটি ভবন টিকে আছে।

রাফাহর তেল আল-সুলতানের পার্শ্ববর্তী সৌদি পাড়ারও একই অবস্থা। সেখানে চলছে ব্যাপক ভাঙন। ওই এলাকায় একসময় শহরের বৃহত্তম মসজিদ ও বেশ কয়েকটি স্কুল ছিল। একটি যাচাই করা ভিডিও ক্লিপে রাফাহর একটি সড়ক ধরে ট্যাঙ্ক চলাচল করতে দেখা গেছে। পাশেই ভেকু দিয়ে ভবনকে গুঁড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার কাজ চলছিল। উপত্যকার অন্যান্য অংশেও ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ দৃশ্যমান।

কৃষি শহর খুজা’আ ইসরাইলের সীমান্ত থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। যুদ্ধের আগে এ শহরের জনসংখ্যা ছিল ১১ হাজার। সেখানে ছিল উর্বর কৃষিজমি। টমেটো, গম ও জলপাইয়ের মতো ফসলের জন্য পরিচিত ছিল এলাকাটি। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা খুজা’আর এক হাজার ২০০টি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

পার্শ্ববর্তী শহর আবাসান আল-কাবিরাতের গল্প একই রকম। যুদ্ধের আগে সেখানে প্রায় ২৭ হাজার মানুষ থাকতেন। গত ৩১ মে ও ৮ জুলাই তোলা ছবিতে তুলনা করে দেখা গেছে, মাত্র ৩৮ দিনে বিস্তীর্ণ এলাকা মাটিতে মিশে গেছে।

বিবিসি ভেরিফাইয়ের সঙ্গে কথা বলা বেশ কয়েকজন মানবাধিকার আইনজীবী বলেছেন, ইসরাইলের এ অভিযান যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে। জেরুজালেমের ডায়াকোনিয়া আন্তর্জাতিক মানবিক আইন কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ আইন বিশেষজ্ঞ আইটান ডায়মন্ড বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সশস্ত্র সংঘাতের সময় বেসামরিক সম্পত্তির এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত ধ্বংস নিষিদ্ধ করেছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
যে কারণে প্রশংসায় ভাসছেন কেবিন ক্রু
যে কারণে প্রশংসায় ভাসছেন কেবিন ক্রু
সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি আর নেই
সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি আর নেই
নেপালে তুষারঝড়-ধসে ৯ পর্বতারোহী নিহত
নেপালে তুষারঝড়-ধসে ৯ পর্বতারোহী নিহত
যে অভিযোগে গ্রেপ্তার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ আইনজীবী
যে অভিযোগে গ্রেপ্তার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ আইনজীবী