মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
মিয়ানমারে গণহত্যা

যে ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়, আসলে যা ঘটেছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০১:০৮ পিএম

মিয়ানমারের গণহত্যা বিষয়ক সম্প্রতি কিছু ছবি সোশাল মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছে। ছবিগুলোতে মিয়ানমারের গণহত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। এসব ছবিতে অসংখ্য মানুষের হাড় গোড়, মাথার খুলি দেখা গেছে। নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গারদের ছবি এগুলো। গণহত্যার প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করতে মৃত দেহগুলো গ্যাসোলিন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় বৌদ্ধ সেনারা এমন অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। তবে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা হলেও এই ছবিগুলোর বাস্তব ঘটনা কি বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা যায়নি।

আলোচনায় আসা ছবিগুলো অনেকেই শেয়ারও করেছেন। পাশাপাশি এ নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এর মধ্যে শামসুল হুদা নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই ছবিগুলো শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন ‘এই হলো মুসলমানদের বর্তমান ভাগ্য। আমরা বাংলাদেশিরা ভাবছি, আমরা তো ভালো আছি। সামনে আমাদের জন্য কী পরিণতি অপেক্ষা করছে, সেটা নিয়ে আমাদের এখনই ভাবা উচিত এবং করণীয় নির্ধারণ করা উচিত’।

আসলাম পারভেজ রহমান নামে আরেকজন ছবির ক্যাপশনে লেখেন ‘কবরস্থান থেকে তোলা কঙ্কাল নয়; এই লোমহর্ষক, বিভৎস দৃশ্যগুলো আরাকানের। গতবছর মে মাসে ২ তারিখে ‘সন্ত্রাসী বৌদ্ধিষ্ট আরাকান আর্মি’ কতৃক চালানো রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যার প্রমাণ এটি। সাম্প্রতিক সময়ে কোন ব্যক্তির ক্যামরায় এই দৃশ্যগুলো প্রকাশ্যে আসে। বিস্তারিত বিবরণে জানা যায়, মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের বুটিডং টাউনশিপের 'হয়াছেরি’ এলাকায় গতবছর মে মাসের ২ তারিখ সকালে এই গণহ"ত্যা সংঘটিত হয়। যেখানে একসাথে ৬০০ নিরপরাধ মুসলিমকে বৌদ্ধ সেনা সন্ত্রাসীরা হ'ত্যা করে। যাদের মধ্যে ছিল নারী, শিশু এমনকি গর্ভবতী। এই এলাকার গণহত্যা থেকে বেঁচে ফেরা রোহিঙ্গারা বলেন বৌদ্ধ সেনারা এই মৃত দেহগুলোর প্রমাণ নষ্ট করতে সেসময় গ্যাসোলিন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ওই এলাকায় গিলে দেখা যায় মৃতদেহগুলোর অবশেষ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। এটি তো শুধু একটি মাত্র গ্রামের গণহ'ত্যা। এমন শত শত লোমহর্ষক হত্যাকান্ড পুরো আরাকানজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধ গত এক দশক ধরে সংঘটিত হচ্ছে। বর্তমানে ভারতীয় রাজনীতিতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিষয়টা হেডলাইন হয়ে উঠেছে। এই রোহিঙ্গা ইসু নিয়ে যখন অন্যান্য দেশ গুলো মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে,তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রেসার সৃষ্টি করে তখন ভারত সরকার মায়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেয়। এই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পক্ষে না গিয়ে মায়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেয়।’ এ ভাবে আরো অনেকেই ছবিগুলো নিয়ে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে গত ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সেনাবাহিনী একটি বেসামরিক অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। আগামী ডিসেম্বরে পরিকল্পিত জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সরকার গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য দায়িত্বের পাশাপাশি জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীকে যে ফরমানের (ডিক্রির) মাধ্যমে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করা হয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য একটি বিশেষ কমিশনও গঠন করা হয়েছে।

মিয়ানমার জান্তার এ পদক্ষেপে দেশটির ক্ষমতাকাঠামো পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত নেই। কারণ, সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা মিন অং হ্লাইং এখনো ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টসহ সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সামরিক বাহিনীর প্রধানের পদও ধরে রেখেছেন।

সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন জানান, অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল, গতকাল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারির পর তা সাতবার নবায়ন করা হয়েছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমকে এই মুখপাত্র বলেন, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান বলেছেন, আগামী ছয় মাস নির্বাচনের প্রস্তুতি ও আয়োজনের সময় হিসেবে বিবেচিত হবে।

২০২১ সালে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির সরকারকে উৎখাতের পর থেকে মিয়ানমার চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। তখন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। সেনাবাহিনী বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু জান্তা সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচনকে পশ্চিমা সরকারগুলো প্রহসন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, এই নির্বাচন জেনারেলদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার উপায় ছাড়া কিছু নয়। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট দলগুলোই প্রভাব বিস্তার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, বিরোধী দলগুলোকে হয়তো নির্বাচন করতে বাধা দেওয়া হয়েছে, নয়তো তারা ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।মিয়ানমার-বিষয়ক স্বাধীন বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন বলেন, ক্ষমতায় যে রদবদল করা হয়েছে, তা লোকদেখানো। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা আগের মতোই অত্যাচারী ও দমনমূলক আচরণ চালিয়ে যাবেন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
যে কারণে প্রশংসায় ভাসছেন কেবিন ক্রু
যে কারণে প্রশংসায় ভাসছেন কেবিন ক্রু
সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি আর নেই
সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি আর নেই
নেপালে তুষারঝড়-ধসে ৯ পর্বতারোহী নিহত
নেপালে তুষারঝড়-ধসে ৯ পর্বতারোহী নিহত
যে অভিযোগে গ্রেপ্তার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ আইনজীবী
যে অভিযোগে গ্রেপ্তার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ আইনজীবী