
		মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক’। ‘জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় শুল্কারোপের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে ভারত। খবর এনডিটিভির। রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর ফলে দেশটির ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ালো ৫০ শতাংশ।
ট্রাম্প অবশ্য ভারতের ওপর শুল্কহার বাড়ানোর কথা আগেই জানিয়েছিলেন । ৫ আগস্ট মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্কহার ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ বাড়াতে পারেন তিনি। ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ৬ আগস্ট বুধবার এক ঘোষণায় তিনি জানান, রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ‘শাস্তি’ হিসেবে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় দেয়া বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা এরই মধ্যে এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছি। আমাদের তেল আমদানি বাজারভিত্তিক এবং ভারতের ১৪০ কোটির বেশি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সার্বিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই করা হয়েছে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করাকে আমরা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মনে করি। বিশেষত যখন অন্যান্য অনেক দেশও তাদের জাতীয় স্বার্থে একই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা আবারও জোর দিয়ে বলছি, এসব পদক্ষেপ অবিচারপূর্ণ, অযৌক্তিক এবং অযথা। ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করব।
ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে যে শুল্ক বসিয়েছে তা আজ ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। তার আগেই ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হলো। এর আগে গত ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার এক নির্বাহী আদেশ জারি করেন ট্রাম্প। তাতে বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্কের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। ওই আদেশে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানানো হয়।পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপের কথাও বলা হয়। তবে কী পরিমাণ জরিমানা আরোপ করা হবে, সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশ নিতে চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনের তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠিতব্য এসসিও সম্মেলনে অংশ নেবেন তিনি। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় উভয় পক্ষের সেনাবাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
মোদির চীন সফরকে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০১৯ সালে সর্বশেষ চীন সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেই হিসেবে দীর্ঘ সাত বছর পর চীন যাচ্ছেন তিনি। এই সফরে এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মোদির বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কাজান শহরে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর দুই দফায় ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এ নিয়ে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মোদির চীন সফর কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ তাৎপর্য বহন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন