
		ভারতে আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির জম্মু ও কাশ্মীরে ‘মেঘ বিস্ফোরণে’ সৃষ্ট বন্যায় ওইসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। মৃতদের মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর (সিআইএসএফ) দুই কর্মীও রয়েছেন। এ ঘটনায় ১০০ জন আহত এবং অনেক মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারতের সেনাবাহিনীও উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায় ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে জম্মু ও কাশ্মীরের কিশতোয়ার জেলার চাশোটি এলাকায় ভয়াবহ এ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। অল্প সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট আকস্মিক এ বন্যার পানি নিচু এলাকায় যা ছিল তার সবই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এতে নিচু জায়গাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাতে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আনন্দবাজার জানায় মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নেমে আসা ভয়াবহ হড়পা বান। আর তার জেরে বিধ্বস্ত একের পর এক গ্রাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে চশোতী গ্রামের কাছে মচৈল মাতা মন্দিরের কাছে দুর্ঘটনায় মৃত ৪৬ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর এখনও প্রায় ২০০ জন মানুষ নিখোঁজ। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও রাতে উদ্ধারের কাজ চলছে বলে প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে। কাদামাটি ও পাথরের স্তূপ খুঁড়ে আটকে পড়াদের উদ্ধারের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে ৩০০-র বেশি সেনাকর্মীকে! বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১৬০ জনেরও বেশি জীবিত মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৩৮ জনের অবস্থা গুরুতর বলে পিটিআই জানাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার কিশ্তওয়াড়ের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, কাশ্মীরে আকস্মিক বন্যার শিকার হতভাগ্যদের জন্য আমি গভীর ভাবে শোকাহত। ইতিমধ্যেই কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে, এবং আরও অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন ভয়াবহ দুর্যোগে। হড়পা বানে মৃতদের শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন তিনি। স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চশোতী গ্রাম থেকে ‘মচৈল মাতা যাত্রা’ শুরুর কথা ছিল। সেই উপলক্ষে অনেক পুণ্যার্থী জড়ো হয়েছিলেন ওই গ্রামে। তাবুঁ খাটিয়ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। হড়পা বানে সেই সব তাঁবু ভেসে গিয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক সুনীলকুমার শর্মা জানিয়েছেন, এমন ভয়াবহ বিপর্যয় আগে কখনও দেখেনি কিশ্তওয়াড়।
এদিকে এই দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্ভাব্য সকল সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সামাজিক যোগযোগমাধ্যম এক্সের এক বার্তায় তিনি বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের কিশতওয়ারে মেঘ বিস্ফোরণ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি আমার সমবেদনা এবং প্রার্থনা। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। প্রয়োজনে সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদান করা হবে।
জম্মু ও কাশ্মীরে প্রতিবছর কিসওয়ারের মাতা চণ্ডী হিমালয় তীর্থস্থানের বার্ষিক যাত্রা হয়। এই তীর্থস্থানে যেতে চাশোটি হয়ে যেতে হয়। চাশোটি হলো তীর্থস্থানে যাত্রা শুরুর স্থান। অঞ্চলটি বেশ দুর্গম। তবে এই চাশোটি গ্রামের পর আর গাড়ি যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। মেঘ বিস্ফোরণে আকস্মিক বন্যার কারণে এবারের বার্ষিক যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক কর্মকর্তা।
মেঘ বিস্ফোরণ কী? কোনো ছোট এলাকায় (এক থেকে ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত) এক ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হলে সেই ঘটনাকে ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘ বিস্ফোরণ বলে চিহ্নিত করা হয়। ক্লাউডবার্স্টের কারণে অতিভারি বৃষ্টি দেখা যায়। তবে এর সঙ্গে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পার্থক্য আছে। একটা ছোট এলাকায় মেঘ হঠাৎ ঘনীভূত হওয়ার কারণে মেঘভাঙা বৃষ্টি দেখা দেয়। এর তীব্রতা এবং প্রভাব স্বাভাবিক অবস্থায় ভারি বা অতিভারি বৃষ্টির চাইতে অনেক বেশি, ক্ষতি করার শক্তিও বেশি। এই জাতীয় বৃষ্টির ফলে পার্বত্য অঞ্চলে প্রায়শই ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা আকস্মিক বন্যা এবং ল্যান্ডস্লাইড বা ভূমিধস দেখা যায়। প্রাণনাশ এবং বড় আকারে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে।
সম্প্রতি ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশীতে মেঘ বিস্ফোরণ বৃষ্টি এবং আকস্মিক বন্যার জেরে বহু প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে । তীব্র বেগে ধেয়ে আসা ক্ষীরগঙ্গা নদীর জল এবং সঙ্গে বয়ে আসা বড় পাথর আর কাদার স্রোতের প্রভাবে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে উত্তরকাশীর ধরালি গ্রামের বিস্তীর্ণ অংশ। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে হর্ষিল উপত্যকা সংলগ্ন অঞ্চলে।
মন্তব্য করুন