
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষের তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা চালিয়েই যাচ্ছে দখলদার ইসরাইল। সম্প্রতি গাজার কাছাকাছি থাকা প্রায় ৮ লাখ ফিলিস্তিনিকে বিশ্বের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এ তথ্য জানিয়েছে ইউরো-মেডিটেরানিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর । সংগঠনের বরাত দিয়ে আল জাজিরা আরবিক জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনারা শহরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে প্রবেশের সাথে সাথে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
চলমান বোমাবর্ষণ ও আবাসিক টাওয়ার এবং যোগাযোগ অবকাঠামোর ধ্বংসের কারণে গাজায় পুরোপুরি তথ্য যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে। গাজা শহর ইন্টারনেট এবং অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দিনেও সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউটে রয়েছে, যা ইসরাইলি আকাশ হামলার পর অবকাঠামো ধ্বংসের কারণে ঘটেছে।
গাজায় ইসরাইলি হামলায় প্রাণ গেল আরও ৭৯ ফিলিস্তিনির : এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৭৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ১৪১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৭৯ টি মরদেহ আনা হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ২২৮ জন। এর ফলে ইসরাইলি আগ্রাসনে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অনেক মৃতদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় পড়ে আছে কিন্তু উদ্ধারকারীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছে না।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মানবিক সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টার সময় ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে ৮ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ৩৩ জনেরও বেশি। গত ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরাইলি হামলায় ২ হাজার ৫১৩ জন নিহত এবং ১৮ হাজার ৪১৪ জনের বেশি আহত হয়েছেন।এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ আরও চারজন ফিলিস্তিনি অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছেন।
এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৪৩৫ জনে। এদের মধ্যে ১৪৭টি শিশু। গত ২ মার্চ থেকে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ গাজার সব সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে উপত্যকাটির ২৪ লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে এবং সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এটি মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ এবং খান ইউনিসে ছড়িয়ে পড়বে। আইপিসির এ ঘোষণার পর ৩২ শিশুসহ ১৫৭ জন অনাহারে মারা গেছেন।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন