
		যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনের প্রচার শেষ। আগামীকাল ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নানা কারণে এ এ নির্বাচন আলোচনায়। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আগাম ভোট। জানা গেছে এ নির্বাচন সামনে রেখে ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্কে এটাই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। গতকাল রোববার ছিল আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন।
এদিন প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। নগরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার ঘটনা। তা ছাড়া এদিন ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এর মধ্য দিয়ে আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের গড় বয়সও কমে এসেছে। গড় বয়স ৫০ বছরে নেমে এসেছে।
আগের সপ্তাহের প্রথম দিকে কম বয়সী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ওই সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ হাজার নিউইয়র্কবাসী ভোট দিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গতকাল রোববারই এ বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি।
নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।
নিউইয়র্কে সর্বপ্রথম মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ২০২১ সালে। ওই নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। ওই নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্লিওয়াকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন।
অবশ্য চলতি বছর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটকে ছাড়াতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের বয়স তুলনামূলক কম। এটা অবাক করা বিষয়। কারণ, সাধারণত যারা আগাম ভোট দেন তাঁদের গড় বয়স মোট নিবন্ধিতদের গড় বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি। গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের গড় বয়স ছিল ৫১ বছর। তবে এবার মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটারদের গড় বয়স আরও কমে ৫০ বছরে নেমেছে।
সর্বশেষ চার জরিপে এগিয়ে জোহরান মামদানি : এদিকে সর্বশেষ পাওয়া নতুন কয়েক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জোহরান মামদানি বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। তবে অন্তত একটি জরিপ বলছে, প্রধান তিন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জোহরান ও কুমোর মধ্য যে কারও জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। এই জরিপ দেখলে মনে হয়, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের উত্তরসূরি কে হবেনসেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ জমে উঠেছে।গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এমারসন কলেজ/পিআইএক্স ১১/দ্য হিলের জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রায় ২৫ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। এই জরিপে জোহরানের প্রতি ৫০ শতাংশ এবং কুমোর প্রতি ২৫ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন।
রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া কুমোর থেকে চার পয়েন্ট পিছিয়ে আছেন। স্লিওয়ার প্রতি সমর্থন রয়েছে ২১ শতাংশ ভোটারের এবং ৪ শতাংশ ভোটার কাকে ভোট দেবেন, এখনো সেই সিদ্ধান্ত নেননি। অর্থাৎ কুমোর খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছেন স্লিওয়া। জোহরানের সমর্থন গত মাসের তুলনায় ৭ শতাংশ বেড়েছে, কুমোর জনসমর্থন ৩ শতাংশ কমেছে, আর স্লিওয়ার সমর্থন বেড়েছে ১১ শতাংশ।এই জরিপ গত ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে। এতে সম্ভাব্য ভোটার ও যাঁরা ইতিমধ্যে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা অংশ নিয়েছেন। এতে এরর অব মার্জিন বা ভুলের পরিমাণ ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
এমারসন কলেজ পোলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক স্পেনসার কিমবলের ভাষায়, জোহরান বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি জোট গড়ে তুলেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে তাঁর সমর্থন গত মাসে ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে কুমোর সমর্থন ১০ পয়েন্ট কমেছে।
জোহরান তরুণ ভোটারদের মধ্যেও শক্ত অবস্থানে আছেন। ৫০ বছরের নিচের ৬৯ শতাংশ ভোটার তাঁকে সমর্থন করছেন। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সী ভোটারদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ জোহরানকে, ৩১ শতাংশ কুমোকে এবং ২৮ শতাংশ স্লিওয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মারিস্ট নিউইয়র্ক সিটি জরিপে দেখা গেছে, সম্ভাব্য ভোটারদের মধ্যে জোহরান স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোর চেয়ে ১৬ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী স্লিওয়ার তুলনায় জোহরান মামদানি প্রায় ৩২ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। জরিপে দেখা যায়, কাকে ভোট দেবেন, সে ব্যাপারে যাঁরা এখনো পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেননি-তবে এক প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে আছেন, তাঁদের মধ্যে জোহরানের প্রতি সমর্থন রয়েছে ৪৮ শতাংশ ভোটারের। আর কুমোর প্রতি ৩২ শতাংশ ও স্লিওয়ার প্রতি ১৬ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে। এই জরিপ ২৪ থেকে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে। এতে ত্রুটির সীমা হতে পারে ৪ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট। এই ফল সেপ্টেম্বরের মারিস্ট জরিপের সঙ্গে প্রায় মিলে গেছে। তখনো বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। ওই সময় জোহরানকে ৪৬ শতাংশ, কুমোকে ৩০ শতাংশ ও স্লিওয়াকে ১৮ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছিলেন।
সর্বশেষ মারিস্টের জরিপে দেখা গেছে, স্লিওয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালে জোহরানের প্রতি সমর্থন বেড়ে দাঁড়াবে ৫১ শতাংশ। অন্যদিকে কুমো সমর্থন পাবেন ৪৪ শতাংশ ভোটারের। যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে কুমো ২০২১ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের গত বুধবার প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, জোহরান ৪৩ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটারের সমর্থন পাচ্ছেন। অন্যদিকে কুমোর প্রতি ৩৩ শতাংশ ও স্লিওয়ার প্রতি মাত্র ১৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে।
কুইনিপিয়াকের সহকারী পরিচালক মেরি স্নো বলেন, ‘প্রার্থীরা তাঁদের বক্তব্য পেশ করেছেন, আগাম ভোট শুরু হয়েছে, কুমোর চেয়ে জোহরান ১০ পয়েন্ট এগিয়ে, স্লিওয়া অনেক পিছিয়ে। তবে এখনো একটি ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ আছে-সেটি হচ্ছে সিদ্ধান্তহীন ভোটারের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, যা শেষ পর্যায়ে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।সিদ্ধান্তহীন ভোটারের সংখ্যা ৯ অক্টোবরের পর থেকে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সর্বশেষ কুইনিপিয়াক জরিপে দেখা যায়, ২৩ থেকে ২৭ অক্টোবর সময়ে ৬ শতাংশ ভোটার সিদ্ধান্তহীন ছিলেন, আগের জরিপে এই সংখ্যা ছিল ৩ শতাংশ। তখন জোহরানের প্রতি ৪৬ শতাংশ, কুমোর প্রতি ৩৩ শতাংশ ও স্লিওয়ার প্রতি ১৫ শতাংশ সমর্থন ছিল।
তবে ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত সাফোক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে দেখা গেছে, প্রতিযোগিতা আগের তুলনায় কিছুটা কাছাকাছি এসেছে। ২৩ থেকে ২৬ অক্টোবরের জরিপে জোহরানের সঙ্গে কুমোর সমর্থনের পার্থক্য ১০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এই জরিপে দেখা গেছে, ৪৪ শতাংশ ভোটার জোহরানের প্রতি এবং ৩৪ শতাংশ কুমোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অন্যদিকে স্লিওয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ১১ শতাংশ ভোটার। সেপ্টেম্বরে কুমোর চেয়ে জোহরান ২০ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।
সাফোক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক ডেভিড প্যালিওলোগাস বলেন, এই নির্বাচনে এক ব্যক্তির ভোটাররাই ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি হচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া। তাঁর ১১ শতাংশ ভোট কুমোর জয়ের পথে বড় বাধা। দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে সেই ভোটারদের ৩৬ শতাংশ কুমোকে এবং মাত্র ২ শতাংশ জোহরানকে পছন্দ করেন।
কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়া এলাকা থেকে রাজ্যের আইনসভার সদস্য জোহরান প্রচারের বড় অংশ ব্যয় করেছেন মাঝারি ও রক্ষণশীল ভোটারদের আশ্বস্ত করতে। কারণ, তিনি একজন ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট। তিনি পুলিশের বাজেট কমানোর সমর্থক এবং ফিলিস্তিনপন্থী হিসেবে পরিচিত। সাফোক জরিপটি চালিয়েছিল মেয়র এরিক অ্যাডামস কুমোকে সমর্থন জানানোর পর। এই জরিপের ত্রুটির সীমা±৪ দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্ট।
স্লিওয়া অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান নাকচ করে দিয়েছেন। এমনকি তাঁর সাবেক নিয়োগকর্তা ও প্রভাবশালী রাজনীতিক ডব্লিউএবিসি রেডিওর মালিক জন ক্যাটসিমাটিডিসও তাঁকে সরে যেতে বলেছেন। অন্যদিকে কুমো জুনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে জোহরানের কাছে হেরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন।
মারিস্টের অক্টোবর জরিপ অনুযায়ী, শুধু মামদানি ও কুমোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে রিপাবলিকান ভোটারদের ৭৭ শতাংশ কুমোকে এবং মাত্র ১৩ শতাংশ জোহরানকে ভোট দেবেন। এ ছাড়া রিপাবলিকান অন্য কাউকে ভোট দেবেন এবং ৬ শতাংশ এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।কোনো রাজনৈতিক দলে নিবন্ধিত নন-এমন ভোটারের মধ্যে কুমো পেয়েছেন ৫১ শতাংশ ও জোহরান পেয়েছেন ৪১ শতাংশ।
মারিস্টের জরিপে দেখা গেছে, সম্ভাব্য ভোটারদের ৫১ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। ৩৮ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা কেন্দ্রে গিয়ে আগাম ভোট দেবেন, আর ১২ শতাংশ ডাকযোগে ভোট দেবেন।ডেমোক্র্যাটদের (৪৮ শতাংশ) তুলনায় রিপাবলিকান (৫৭ শতাংশ) ও অরাজনৈতিক ভোটাররা (৫৬ শতাংশ) বলেছেন, তাঁরা নির্বাচনের দিন ভোট দেবেন। কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়া সম্ভাব্য ভোটারদের মধ্যে জোহরানের সমর্থন ৫২ শতাংশ, কুমোর ৩২ শতাংশ। স্লিওয়ার প্রতি সমর্থন মাত্র ১৫ শতাংশ।নির্বাচনের দিন সরাসরি ভোট দেবেন এমন ভোটার মধ্যে ৪৩ শতাংশ জোহরান মামদানিকে, ৩৩ শতাংশ কুমোকে এবং ১৮ শতাংশ স্লিওয়াকে ভোট দেবেন।
মন্তব্য করুন