রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

জাপানে ভূমিকম্পের পর সুনামির আঘাত

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২২ পিএম

জাপানের উত্তর উপকূলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর পরপরই ইওয়াতে প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় হালকা মাত্রার সুনামি দেখা দেয়। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যার দিকে এই ভূমিকম্প ও সুনামি অনুভূত হয় বলে জানিয়েছে জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ)।

জেএমএ জানায়, বিকেল ৫-৩৭ মিনিটে ইওয়াতের মিয়াকো এলাকায় প্রথম সুনামির আঘাত আসে। তবে ঢেউয়ের উচ্চতা এতটাই কম ছিল যে, তা পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি। দুই মিনিট পর ওফুনাতো উপকূলে ১০ সেন্টিমিটার উচ্চতার আরেকটি ঢেউ আঘাত হানে।

এর আগে বিকেল ৫-০৩ মিনিটে ইওয়াতে উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের পরপরই এক মিটার উচ্চতার সুনামির আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করে জেএমএ। অন্যদিকে, মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮।

জেএমএ আরও জানায়, মূল ভূমিকম্পের পর ৫ দশমিক ৩ থেকে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার বেশ কয়েকটি পরাঘাত (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। জাপানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারে সমুদ্রের শান্ত দৃশ্য দেখা গেছে।

একই দিনে সকালেও একই অঞ্চলে অন্তত ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে, যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ এর মধ্যে। তবে সেগুলোর পর কোনো সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি।উল্লেখ্য, ২০১১ সালে এই একই অঞ্চল ভয়াবহ ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও সুনামির মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ঘটনায় প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত বা নিখোঁজ হন এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের চারটি প্রধান ভূতাত্ত্বিক ফলকের সংযোগস্থলে অবস্থিত। প্রতি বছর দেশটিতে গড়ে দেড় হাজারের বেশি ভূমিকম্প ঘটে, যার বেশিরভাগই হালকা বা মাঝারি মাত্রার হয়।

এদিকে ফিলিপাইনে ভয়াবহ ‘সুপার টাইফুন ফাং-ওং আঘাত হানার আগেই দেশজুড়ে ৯ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঝড়টি রোববার সন্ধ্যার দিকে ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলে স্থলভাগে আঘাত হানবে। বর্তমানে এটি ঘণ্টায় প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার (১১৫ মাইল) বেগে প্রবাহিত হচ্ছে, এবং দমকা বাতাসের বেগ পৌঁছাতে পারে ২৩০ কিলোমিটার (১৪৩ মাইল) পর্যন্ত। স্থানীয়ভাবে ‘উওয়ান ’ নামে পরিচিত এই ঝড়টি, কয়েক দিন আগেই দেশটিতে তাণ্ডব চালানো ‘টাইফুন কালমেগি’ -এর পর আসছে, যা অন্তত ২০০ জনের প্রাণ কেড়েছিল।

ফিলিপাইন আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, জীবননাশী ও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করতে পারে এমন ৩ মিটার (১০ ফুট) বা তারও বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।ঝড়টি উত্তর-পশ্চিমমুখী হয়ে ফিলিপাইনের সবচেয়ে জনবহুল দ্বীপ লুজন-এর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রোববার সকালে এটি বিকল অঞ্চলে প্রথম আঘাত হানে, পরে দুপুরের দিকে পলিলো দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করে। দেশটির বিভিন্ন স্কুল সোমবারের ক্লাস বাতিল করেছে বা অনলাইন ক্লাসে স্থানান্তরিত করেছে।এছাড়া, প্রায় ৩০০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।ফাং-ওয়ং স্থলভাগে আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হবে বলে পূর্বাভাস, তবে এটি লুজন অতিক্রমের সময়ও টাইফুন হিসেবেই থাকবে।

লুজনের কিছু এলাকায় ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে, আর মেট্রো ম্যানিলা অঞ্চলে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার। ফলে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফাং-ওং-এর আগমনে আগের টাইফুন কালমেগি-এর পর উদ্ধার কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই ঝড়ে প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে মাটি ও কাদা বন্যা আকারে বয়ে গিয়ে বহু এলাকা ধ্বংস করেছিল।সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০০ জনেরও বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। ভিয়েতনামেও ৫ জন মারা গেছেন, যেখানে শক্তিশালী বাতাসে গাছ উপড়ে পড়ে এবং ভবনের ছাদ উড়ে যায়।

ফিলিপাইন সরকার কালমেগির পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং ফাং-ওয়ং-এর আগমনের প্রস্তুতিতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এর ফলে প্রশাসন জরুরি তহবিল ব্যবহার ও খাদ্য ও ত্রাণ বিতরণ দ্রুততর করতে পারবে। অনেকেই আগের ঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞে আতঙ্কিত। নরলিটো দুগান, সোরসোগন শহরের এক বাসিন্দা, এএফপি-কে বলেন, গত ঝড়ে আমাদের এলাকা প্লাবিত হয়েছিল, তাই এবার আমি পরিবার নিয়ে আগেই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছি। আরেকজন, ম্যাকসিন দুগান, বলেন, “আমার বাড়ির পাশে ঢেউ এখন অনেক বড়। তাই আমি এখানেই আশ্রয় নিয়েছি।”

প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তিস্থলের কাছাকাছি হওয়ায়, ফিলিপাইন বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। প্রতি বছর প্রায় ২০টি উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ওই অঞ্চলে সৃষ্টি হয়, যার অর্ধেক সরাসরি ফিলিপাইনে আঘাত হানে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঝড়ের সংখ্যা না বাড়ালেও, উষ্ণ সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডল ঝড়গুলোকে আরও শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক করে তুলছে-যা তীব্র বাতাস, ভারী বৃষ্টিপাত ও উপকূলীয় বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ট্রাম্পের যে ছবি ভাইরাল
ট্রাম্পের যে ছবি ভাইরাল
বাংলাদেশিসহ মালয়েশিয়া-থাই সমুদ্রসীমায় ৯০ অভিবাসীকে নিয়ে নৌকাডুবি
বাংলাদেশিসহ মালয়েশিয়া-থাই সমুদ্রসীমায় ৯০ অভিবাসীকে নিয়ে নৌকাডুবি
হেলমেট না পরায় ২১ লাখ রুপি জরিমানা
হেলমেট না পরায় ২১ লাখ রুপি জরিমানা
শাটডাউনে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র, একদিনে বাতিল ১৪০০ ফ্লাইট
শাটডাউনে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র, একদিনে বাতিল ১৪০০ ফ্লাইট