
		ভোরের আলো ফোটার আগেই মাছ ধরার নৌকা ভেসে যায় সাগরের বুকে। ঢেউয়ের কোল ঘেঁষে জেলেরা জাল ফেলে দেয়—তাদের লক্ষ্য শুধু মাছ নয়, কখনও কখনও আরও বিশেষ কিছু। সেদিনও তেমনই এক জেলে, নোনা হাওয়া গায়ে মেখে, চোখ রাখলেন জালের ভাঁজে। হঠাৎই দেখা মিলল ছোট ছোট গোলাকার কিছু জীবের—তীক্ষ্ণ কাঁটা ঘেরা, শান্তভাবে নড়ছে জলের গভীরে।
প্রথম দেখায় তেমন কিছু মনে না হলেও, এই ছোট্ট জীবই এখন পৃথিবীর নানা প্রান্তে এক বিলাসবহুল দামী খাবার, চিকিৎসা গবেষণার সম্পদ এবং উপকূলীয় জীবিকার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাণীটির নাম সি আর্চিন।
ভাবছেন তো সি আর্চিন কেন এত মূল্যবান সি আর্চিনের প্রজনন অঙ্গ, যাকে বলা হয় 'ইউনি', সুশিপ্রেমীদের কাছে স্বপ্নের খাবার। মাখনের মতো নরম, সামান্য মিষ্টি এবং কিছুটা সামুদ্রিক নোনা ধরণের স্বাদের এই অংশ জাপান, কোরিয়া ও ইউরোপের দামি রেস্তোরাঁয় পরিবেশিত হয়।
এছাড়া সি আর্চিনে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-এ, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
বিজ্ঞানীদের পরীক্ষাগারেও সি আর্চিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণাগারে এর কোষগুলো ব্যবহার করা হয় মানব কোষ বিভাজন ও জিন গবেষণায়। অনেক ওষুধ উদ্ভাবনের পেছনেও আছে এই প্রাণীর অবদান।
বিশ্ববাজারে প্রতি কেজি ইউনি ৫০০-১০০০ ডলারের মতো দামে বিক্রি হয়। উপকূলবর্তী জেলেরা তাই এখন সি আর্চিন চাষেও বেশি করে ঝুঁকছেন। তবে অতিরিক্ত শিকার, দূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণতা সি আর্চিনের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে। কিন্তু পরিকল্পিত চাষ ও সুরক্ষার মাধ্যমে এই প্রাণী হতে পারে টেকসই উন্নয়নের অংশ।
সি আর্চিন কেবল কাঁটায় ঘেরা এক প্রাণী নয়; এটি সমুদ্রের অন্দরে লুকিয়ে থাকা এক নীরব রত্ন, যা খাবার, বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে রেখে চলেছে অসাধারণ অবদান। প্রকৃতির এই বিস্ময়কে বুঝতে গেলে দেখতে হয় একটু গভীরভাবে।
মন্তব্য করুন