মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

বাদুড়ের কামড়ে মৃত্যু, কতটা ভয়ঙ্কর এই প্রাণীর লালায় থাকা লিসাভাইরাস?

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাদুড়ের কামড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। তার শরীরে ধরা পড়েছে লিসাভাইরাসের সংক্রমণ— যা জলাতঙ্কের মতো প্রাণঘাতী এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর আক্রমণ করে। তবে এটি সরাসরি জলাতঙ্ক নয়, বরং র‌্যাবিস ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে খুব দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কীভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস? লিসাভাইরাস মূলত বাদুড়ের লালায় থাকে। বাদুড়ের কামড়, আঁচড়, এমনকি বাদুড়ের মল-মূত্র বা মৃত বাদুড়ের দেহ থেকেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। বিশেষ করে ফ্লাইং ফক্স বা ফল খাওয়া বাদুড় লিসাভাইরাসের বাহক হিসেবে পরিচিত। তবে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ অ্যালিসন পিল জানিয়েছেন, সব ফল খাওয়া বাদুড় এই ভাইরাস বহন করে না— কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতিই বিপদজনক।

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের বাসিন্দা এক ব্যক্তি সম্প্রতি একটি ফক্স ব্যাটের কামড়ে আক্রান্ত হন। কয়েক দিনের মধ্যেই তার জলাতঙ্কের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে লিসাভাইরাসের উপস্থিতি। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিম মাহোনি জানিয়েছেন, বাদুড়ের লালা থেকে ভাইরাস সরাসরি ওই ব্যক্তির রক্তে মিশে গিয়েছিল, তারপর দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

কী কী উপসর্গ হতে পারে? লিসাভাইরাস সংক্রমণ হলে প্রাথমিকভাবে দেখা দিতে পারে—

  • জ্বর
  • পেশিতে ব্যথা
  • ক্লান্তি
  • কামড় বা আঁচড়ের স্থানে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, ক্ষত থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হওয়া

সংক্রমণ আরও গুরুতর হলে দেখা দিতে পারে—

  • স্নায়ুজনিত সমস্যা
  • পক্ষাঘাত
  • জলাতঙ্কের মতো জল দেখলে আতঙ্ক
  • অস্থিরতা, বিভ্রান্তি
  • খিঁচুনি
  • কোমায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা

কতটা ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস? লিসাভাইরাসও এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস, যা করোনা, ইবোলা, নিপা, হেন্ড্রা, সার্স-কোভ, মার্স-কোভের মতো ভাইরাসের পরিবারের সদস্য। আরএনএ ভাইরাসগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য, এরা নিজেদের জিনে দ্রুত পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। ফলে এদের সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। বিজ্ঞানীরা তাই মানুষ ও বাদুড়ের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।

চিকিৎসা আছে কি? লিসাভাইরাস সংক্রমণের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ওষুধ এখনও পর্যন্ত নেই। তাই কোনও অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা বাদুড়ের কামড়-আঁচড়ের মতো ঘটনার পর অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আক্রান্তের রক্ত বা টিস্যু নমুনা জিনোম পরীক্ষা করতে পাঠানোই একমাত্র উপায় যাতে দ্রুত ভাইরাস শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

১৯৯০-এর দশকে প্রথম লিসাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। ২০১৮ সালেও অস্ট্রেলিয়ায় কয়েকটি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। করোনা মহামারির পরে ফের বাদুড়-জনিত রোগের এমন খবর বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিকেলের নাস্তায় মজাদার পালংশাকের লুচি
বিকেলের নাস্তায় মজাদার পালংশাকের লুচি
যেভাবে আয়নার দাগ দূর করবেন
যেভাবে আয়নার দাগ দূর করবেন
গলা ব্যথায় এড়িয়ে যাবেন যেসব খাবার
গলা ব্যথায় এড়িয়ে যাবেন যেসব খাবার
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা