
		শিশুদের জন্য আনন্দের অন্যতম উৎস খেলনা। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে চমকে দেওয়ার মতো এক তথ্য। বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া বহু প্লাস্টিক খেলনায় রয়েছে বিপদজনক মাত্রার সীসা ও অন্যান্য ভারী ধাতু। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন আয়োজিত গবেষণা "টক্সিক প্লে-টাইম"-এ এসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
ঢাকার চকবাজার থেকে সংগৃহীত ৭০টি খেলনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, ৭০ শতাংশ খেলনায় নিরাপদ মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে সীসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। একটি খেলনায় তো সীসার মাত্রা পাওয়া গেছে নিরাপদ সীমার ২৬ গুণ বেশিযা শিশুদের স্নায়বিক বিকাশে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই গবেষণায় ফিলিপাইনভিত্তিক সংস্থা ব্যান টক্সিকস-এর এক্সআরএফ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে উজ্জ্বল রঙের খেলনাগুলোতে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা ভয়াবহভাবে বেশি। কিছু খেলনায় ক্লোরিন ও ব্রোমিনের উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে সেগুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে পিভিসি এবং ফ্লেম রিটার্ডেন্ট উপাদানযা দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসার ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
স্থানীয় কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের খেলনাগুলোতে এই মাত্রাতিরিক্ত দূষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খেলনাই সবচেয়ে বেশি বিপদজনক, কারণ এগুলো মানের দিক থেকে খুবই নিম্ন।
এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মুর্শেদ ও সিনিয়র অ্যাডভাইজর ড. শাহরিয়ার হোসেন জোর দিয়ে বলেন, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে অবিলম্বে নিরাপত্তা মানদণ্ড কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আবুল হাশেম জানান, ভারী ধাতু শিশুদের নিউরোলজিকাল বিকাশে ধীরগতির বিষের মতো কাজ করে।
সরকারি দিক থেকেও কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেবিএসটিআই একটি নির্দেশিকা তৈরির প্রস্তাবনা করেছে, যা শিগগিরই নীতিনির্ধারকদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। তবে গবেষকরা বলছেন, এটি শুধু স্বাস্থ্য সংকট নয়শিশুদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘনও। তাই প্রয়োজন আইনি কাঠামোর শক্তিশালী প্রয়োগ, উৎপাদকদের জবাবদিহিতা এবং অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। খেলনা যেন আনন্দের সঙ্গে বিষ না ছড়ায়এটাই এখন সময়ের দাবি।
মন্তব্য করুন