মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

জুম্মার দিন, গোপনে দান করার বিশেষ ফজিলত

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২০ পিএম

‘দানে ধন বাড়ে’, ‘দান করে কেউ দরিদ্র হয় না’- আমাদের সমাজে এমন কথা খুব পরিচিত। একথা সত্য যে ধার্মিক-অধার্মিক কিংবা মুসলিম-অমুসলিমের কোনো ফারাক এখানে নেই। বিশেষত ইসলামে গোপনে দান করার ফজিলত অনেক বেশি, কারণ এতে লোকদেখানোর কোন বিষয় নেই বরং এতে আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ হয়।দান আল্লাহর কাছে অনেক মূল্যবান। উপরন্ত গোপনে দান করলে গুনাহ মাফ হয় এবং সম্পদে বরকত আসে।

ইসলামে জুম্মার দিনকে ‘সপ্তাহের সেরা দিন’ বলা হয়েছে। এই দিনের ইবাদত ও আমলগুলোর মধ্যে ‘দান-সাদকা’ বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। জুম্মার দিনে ‘দান-সাদকা’ শুধু গরিবকে সাহায্য নয়, বরং এটি নিজের জন্য আখিরাতের সঞ্চয়, গুনাহ মাফের উপায় এবং বরকতের দরজা।

জুম্মার দিনে দান-সাদকার গুরুত্ব : সওয়াব দ্বিগুণ হয়- আল্লাহ তাআলা জুম্মার দিনকে বরকতময় করেছেন। এই দিনে করা দান-সাদকা অন্য দিনের তুলনায় অধিক ফজিলতপূর্ণ হয়।

দুঃখ-কষ্ট দূর হয়-হাদিসে এসেছে, ‘দান-সাদকা’ বিপদাপদ ও অমঙ্গল দূর করে। জুম্মার দিনে দান করলে আল্লাহ বান্দাকে রহমত ও নিরাপত্তায় রাখেন।

গরিব-দুঃখীর দোয়া পাওয়া যায় - জুম্মার দিনে মুমিনরা বিশেষ দোয়া করে কারো সাহায্য করলে তার অন্তরের দোয়া সহজে কবুল হয়।

রোজগারে বরকত আসে- দান করলে মাল কমে না, বরং আল্লাহ তাতে দ্বিগুণ-তিগুণ বরকত দেন।

কবরের আজাব হালকা হয়- অনেক আলেম বলেছেন, জুম্মার দিনে দান করলে এটি কবরে নূর হয়ে আসবে।

আল্লাহর রাস্তায় দানের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তাআলা সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন: রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন কিছু ব্যয় করবে তাকে সাতশত গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে।’ (আহমদ, তিরমিজি, নাসাঈ-সহিহ)।

আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান-সদকা করা আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার মত: মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিত রূপে পাবে। (সূরা মুযযাম্মিল: ২০)

বিখ্যাত মুফাসসির ইবনে জায়েদ বলেন, ‘যাকাত দেওয়া ছাড়াও নিজের অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করা। এ খরচ আল্লাহর পথে জিহাদ করা, আল্লাহর বান্দাদের সাহায্য করা, জনকল্যাণমূলক কাজ করা কিংবা অন্যান্য কল্যাণকর কাজেও হতে পারে।’ এভাবে অর্থ ব্যয় করলে আল্লাহ তাকে নিজের জন্য ঋণ বলে গণ্য করেন। তাই তিনি এক্ষেত্রে কেবল আসলটি নয় বরং তার ওপর কয়েকগুণ বেশি দেওয়ার ওয়াদা করেছেন

কাদেরকে দান করব? : সাধারণভাবে গরিব-অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে, জন কল্যাণকর কাজে এবং দ্বীনের প্রয়োজনে সাহায্য করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। তবে নিজ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে গরিব, এতিম ও অসহায় মানুষের উদ্দেশ্যে দান করা অধিক উত্তম। যেমন- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দরিদ্রকে দান করলে কেবল সদকার সওয়াব পাওয়া যায়। আর আত্মীয়কে দান করলে সদকার সওয়াব এবং আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার সওয়াব উভয়ই পাওয়া যায় ‘ (তিরমিজি, হা/৬৫৮ ও ইবনে মাজাহ, হা/১৮৪৪, সনদ সহীহ)

কী পরিমাণ দান করা যায়? : আল্লাহ তাআলা যাকে অর্থ-সম্পদ দান করেছেন সে যত বেশি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে গরিব-অসহায় মানুষ, জনকল্যাণকর কাজ অথবা দ্বীনের সেবায় অর্থ দান করবেন আল্লাহ তাআলা তাকে তত বেশি সওয়াব দান করবেন। কেউ সুস্থ-সবল ও স্বাভাবিক অবস্থায় চাইলে তার জীবন পরিচালনা এবং তার স্ত্রী-পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় খরচ ছাড়া তার সমূদয় সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে দেওয়ার অধিকার রাখে। এতটা দান উচিত নয় যে, সব কিছু দান করার পর সে নিঃস্ব হয়ে যায়। তবে যদি সে শারীরিকভাবে অর্থ-উপার্জনে সক্ষম হয় তাহলে ভিন্ন কথা।

সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায (রাহ.) কে প্রশ্ন করা হয় যে, এক তৃতীয়াংশ সম্পদ দান করা উত্তম নাকি সম্পূর্ণ সম্পদ?

‘যা তার উপকারে আসবে তা তাকে অবশ্যই রাখবে; সব সম্পদ দান করবে না, যেমনটি তিনি কাব (রা.) কে বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার মালের কিছু অংশ রেখে দাও; তা তোমার জন্য উত্তম হবে।’ অতএব যথাটা সম্ভব দান করবে এবং এতটুকু রেখে দিবে যা দ্বারা সে আল্লাহর আনুগত্য করতে পারবে এবং তার পরিবারের জন্য ব্যয় করতে পারবে।’

তবে মৃত্যুর পূর্বক্ষণে মুমূর্ষু অবস্থায় দান (ওসিয়ত) করতে চাইলে ইসলাম একটি পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। আর তা হল, সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ। এর চেয়ে বেশি দান করা জায়েজ নাই। বরং এর চেয়ে কম হলেই ভালো। মুমূর্ষু অবস্থায় দানের ক্ষেত্রে কেউ যদি তার ধন-সম্পদ সব কিছু দানের ওসিয়ত করে যায় তাহলে তার মধ্যে কেবল এক তৃতীয়াংশ কার্যকর হবে। বাকিটা তার ওয়ারিশদের মাঝে যথানিয়মে বণ্টিত হবে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায় তবে তিনটি ছাড়া।

সেগুলো হলো- সদকায়ে জারিয়া (এমন দান যা দ্বারা মানুষ দীর্ঘদিন উপকৃত হয়), এমন ইলম যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দুআ করে।’ (সহিহ মুসলিম, হা/৪৩১০)।

পরিশেষে বলা যায় দান-সদকা করলে সম্পদ কমে না। সামর্থবান মানুষদের থেকে এটা গরীব-অসহায় মানুষের হক। তাই ধর্মীয়, সামাজিক, মানবিক দিক থেকে দান করার গুরুত্ব অপরীসিম। সমাজে দানের চর্চা বাড়বে এই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিকেলের নাস্তায় মজাদার পালংশাকের লুচি
বিকেলের নাস্তায় মজাদার পালংশাকের লুচি
যেভাবে আয়নার দাগ দূর করবেন
যেভাবে আয়নার দাগ দূর করবেন
গলা ব্যথায় এড়িয়ে যাবেন যেসব খাবার
গলা ব্যথায় এড়িয়ে যাবেন যেসব খাবার
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা