মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

বদ নজর থেকে বাঁচার আমল

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০৭ এএম
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১০ পিএম

বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে। সবাই খুব সহজেই অন্যদের ভাল-মন্দ সব জানতে পারছে। আর তখনই লেগে যাচ্ছে বদ নজর। বদ নজর মানে খারাপ দৃষ্টি। এমন অনেক মানুষ আছে যাদের দৃষ্টি খারাপ। খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তাকালে ক্ষতি হয়। মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত বদ নজর। রাসুল সা. এর থেকে বাঁচার আমল ও দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন।

বদ নজর ইসলামে বাস্তব বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। রাসুলুল্লাহ বলেছেন: ‘আল-আইনু হাক্কুন’-বদনজর সত্য। বদ-নজরের সাধারণ কারণ হলো ঈর্ষা আর হিংসা। অর্থাৎ কারো কোন প্রাচুর্য, প্রাপ্তি কিংবা লাভ দেখে যখন অন্য কেউ তাকে ঈর্ষা বা হিংসা করে, তখন ওই ব্যক্তি যে কোনোকিছু লাভ করেছে, তার ওপরে হিংসা-কারীর বদ-নজর লাগতে পারে। তবে হিংসা বা ঈর্ষাকারী যে ওই ব্যক্তির ক্ষতি চায় বলেই বদ-নজর লাগে তা নয়, বরং ওই প্রাপ্তি দেখে তার মধ্যে সেটা লাভের জন্য যা হাহাকার তৈরি হয়, সেই হাহাকার থেকেও বদ-নজর লাগতে পারে।

তার মানে কি, আমরা কারো কোন প্রাপ্তির সংবাদ, কারো ভালো কোনোকিছু সম্পর্কে জানতে চাইতে পারবো না? ব্যাপারটা তা নয়। অবশ্যই কারো কোন ভালো অর্জন, প্রাপ্তি বা লাভ সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো, তবে সেই অর্জন আর প্রাপ্তির কথা শোনার সাথে সাথে প্রথমত আমরা আল্লাহর প্রশংসা পাঠ করবো, দ্বিতীয়ত তার জন্যে আমরা দোয়া করে দেবো। এই দুটো কাজ করা গেলে কারো আর আমাদের বদ-নজর লাগবে না, ইনশা আল্লাহ।

কেউ গাড়ি কিনেছে দেখলে বা শুনলে আমরা বলবো, ‘মা শা আল্লাহ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা আপনার তাওফিক আরো বাড়িয়ে দিন’। কেউ ভালো রেজাল্ট করেছে শুনলে বলবো, ‘মাশাআল্লাহ! আল্লাহ আপনার জ্ঞান আর যোগ্যতা আরো বাড়িয়ে দিন’। কেউ হজে যাচ্ছে শুনলে বলবো ‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা আপনার হজকে কবুল করে নিন’।

কারো বাচ্চা খুব মেধাবী জানতে পারলে বলবো, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লা’হা! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা তাঁকে দ্বীনের জন্য কবুল করে নিন’। কারো দাম্পত্যজীবন খুব সুখে কাটছে শুনলে বলবো, ‘মাশাআল্লাহ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আপনাদের সংসারে আরো ভরপুর বারাকাহ দিন’।

বদনজর থেকে বাঁচার উপায়:

আয়াতুল কুরসি পড়া- প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের পর, শোয়ার আগে পড়া উত্তম।

সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়া সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস মিলিয়ে পড়া হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীর মাখা।

বিসমিল্লাহ বলা, ভালো কিছু দেখলে বা প্রশংসা করতে চাইলে মাশাআল্লাহ বলা। বদনজরের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সদকা করা উত্তম আমল।

রাসুল শিশুদের বদনজর থেকে বাঁচাতে এ দোয়া পড়তেন: (উ’ঈযুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত-তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিন লাম্মাহ)। অর্থ: আমি তোমাদের দুজনকে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমার আশ্রয়ে দিচ্ছি প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী ও বদনজর থেকে।

হাদিসে নববীতেও বদ নজরের প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বদ নজরের প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কেননা নজরের প্রভাব সত্য।’ (ইবনে মাজাহ ৩৫০৮)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে, সকাল হওয়া পর্যন্ত তার উপর হঠাৎ কোনো বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার উপর হঠাৎ কোনো বিপদ আসবে না।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

মোটকথা এভাবে আমরা মানুষের ভালো সংবাদগুলো শোনামাত্রই যদি আমরা আল্লাহকে স্মরণ করি আর তাদের জন্য দোয় করি- আমাদের বদ-নজর থেকে তখন তারা হেফাযত হয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিকেলের নাস্তায় মজাদার পালংশাকের লুচি
বিকেলের নাস্তায় মজাদার পালংশাকের লুচি
যেভাবে আয়নার দাগ দূর করবেন
যেভাবে আয়নার দাগ দূর করবেন
গলা ব্যথায় এড়িয়ে যাবেন যেসব খাবার
গলা ব্যথায় এড়িয়ে যাবেন যেসব খাবার
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা