
ইসলাম ধর্ম মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিকতা, সততা ও মানবতার শিক্ষা দেয়। এই নৈতিকতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- অন্যের সম্মান রক্ষা করা এবং কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে কটূ কথা না বলা। পরনিন্দা বা গীবত (غيبة) ইসলাম ধর্মে একটি গুরুতর গুনাহ। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে পরনিন্দাকে অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ বর্ণনা করাই হলো পরনিন্দা বা পর সমালোচনা। শরিয়তের পরিভাষায় এমন অনৈতিক চর্চাকে ‘গীবত’ বলা হয়। যার দোষ বর্ণনা করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে যদি সেই দোষ তার মধ্যে থাকে তাহলে গীবত হিসেবে গন্য হবে। আর যদি না থাকে, তাহলে তা অপবাদ হিসেবে গণ্য হবে। অপবাদ গীবতের চেয়েও নিকৃষ্ট ও ঘৃণীত।
গীবত শুধু মুখে বলার দ্বারা হয় তা নয়, বরং ইশারা-ইঙ্গিত ও অঙ্গভঙ্গির দ্বারাও গীবত হয়। গীবত শ্রবণ করা গীবত করার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। দুটিই সমান অপরাধ। জীবিত ও মৃত উভয় ধরনের মানুষের গীবত করা হারাম।
গীবত মানুষের ঈমান-আমলকে ধ্বংস করে দেয়। দুনিয়া ও আখিরাতকে বরবাদ করে দেয়। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা অনুমান ও ধারণা (করে কথা বলা) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অনুমান করে কথা বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ২২৮৭)
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘তোমরা কেউ যেন অন্যের গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে, যদি সে তার মৃত ভাইয়ের মাংস খায়? তোমরা তো একে ঘৃণা করবে।’ (সূরা হুজরাত, আয়াত ১২)। এই আয়াতে আল্লাহ পরনিন্দাকে মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা থেকে বোঝা যায়, এটি কতটা ঘৃণিত ও ভয়াবহ পাপ।
সামাজিক দিক থেকেও পরনিন্দা ভয়ংকর। এটি বন্ধুত্ব নষ্ট করে, সমাজে বিভেদ ও শত্রুতা সৃষ্টি করে, মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস জন্ম দেয়। তাই ইসলামে পরনিন্দা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিতেই নয়, সামাজিক দৃষ্টিতেও ধ্বংসাত্মক এক ব্যাধি।
অতএব, একজন সচেতন মুসলমানের উচিত নিজের জবানকে নিয়ন্ত্রণ করা, অন্যের দোষ না খোঁজা এবং ভালো কথা বলায় অভ্যস্ত হওয়া। মহানবী বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে।’
তবে আমাদের সমাজের সিংহভাগ মানুষ এ ধরণের কাজে জড়িত। কখনো অহংকার, ক্রোধ ও সম্মানের মোহ থেকেও গীবত সৃষ্টি হয়। আবার কখনো হিংসা থেকে গীবতের সূত্রপাত হয়। যেভাবেই হোক গীবত চরম নিকৃষ্ট ও ঘৃণীত অপরাধ। গীবত থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যক। কারো দোষ বর্ণনা না করে, শুধরে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
মন্তব্য করুন