
		বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী বাংলাদেশের অহংকার এসএম সুলতানের ১০১তম বার্ষিকী আজ। তিনি ১৯২৪ সালের ১০ আগষ্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. মেছের আলি মাতা মোছা. মাজু বিবি। চেহারার সঙ্গে মিলিয়ে পিতা মাতা আদর করে নাম রেখেছিলেন লাল মিয়া। কালোর্ত্তীন এ চিত্রশিল্পী ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্স আটির্ষ্ট হিসেবে স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে রাষ্টীয় ভাবে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়।
জন্মদিন উপলক্ষে নড়াইলের জেলা প্রশাসন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শিল্পীর রুহের মাগফিরাত কামনায় পবিত্র কোরআন খতম, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, শিল্পীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মাজার জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল। এছাড়া গতকাল শনিবার থেকে জন্মশতবর্ষে সুলতান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদযাপন কমিটির আয়োজনে ঢাকার বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে ‘আমরা পরাজিত হলে এস এম সুলতানের স্বপ্ন আড়ালেই থেকে যাবে’ শিরোনামে দুই বছরব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়েছে।
আমাদের শিল্প সাহিত্য জগতের অনন্য নাম এস এম সুলতান। পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। যদিও শৈশবে তার বাবা নাম রেখেছিলেন লাল মিয়া। বাবা শেখ মোহাম্মদ মেসের আলী ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রি। কিন্তু সুলতানের কাছে তার বাবা ছিলেন একজন শিল্পী। তৎকালীন জমিদার বাড়ির অনেক নকশা সুলতানের বাবার করা। সুলতান সেসব কাজ দেখেছেন একদম কাছ থেকে, যা তাকে পরবর্তীকালে শিল্পী হতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
স্কুলে ভর্তি হলেও স্কুলের বাঁধাধরা নিয়মে পড়ালেখা তার ভালো লাগত না। সময় কাটতো প্রকৃতিকে অনুভব করে। কখনো ক্লাসে বসে আবার কখনো চিত্রা নদীর পাড়ে বসে স্কেচ করতেন। স্কুলের শিক্ষক রঙ্গলাল ব্যাপারটি খেয়াল করলেন। সুলতানের খাতা দেখে বুঝতে পারলেন তার মধ্যে এক শিল্পী বাস করছে। তিনি সুলতানের ভেতরের সেই সত্তাকে গড়ে তুলতে চাইলেন। তিনি সুলতানকে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে রঙ্গলাল সুলতানকে তার সব জ্ঞান উজাড় করে দেন। সেই শুরু।
১৯৫০ সালে ইউরোপ সফরের সময় যৌথ প্রদর্শনীতে তার ছবি সমকালনী বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, ডুফি, সালভাদর দালি, পল ক্লি, মানেট, মাতিসের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। সুলতানই একমাত্র এশিয়ান শিল্পী যার ছবি এসব শিল্পীর ছবির সঙ্গে একত্রে প্রদর্শিত হয়েছে।
শিল্পী এসএম সুলতান বেড়ে উঠেছেন তৎকালীন নড়াইলের চিত্রা নদীর পাশে সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা, পাখির কলকাকলীতে ভরা মাছিমদিয়া গ্রামে। এস এম সুলতানের ৭০ বছরের বোহেমিয়ান জীবনে তিনি তুলির আঁচড়ে দেশ, মাটি, মাটির গন্ধ আর ঘামে ভেজা মেহনতী মানুষের সাথে নিজেকে একাকার করে সৃষ্টি করেছেন ‘পাট কাটা’, ‘ধানকাটা’, ‘ধান ঝাড়া’, ‘জলকে চলা’, ‘চর দখল’, ‘গ্রামের খাল’,‘মৎস্য শিকার’ ‘গ্রামের দুপুর’, ‘নদী পারা পার’, ‘ধান মাড়াই’, ‘জমি কর্ষনে যাত্রা’, ‘মাছ ধরা’, ‘নদীর ঘাটে’, ‘ধান ভানা’, ‘গুন টানা”, ‘ফসল কাটার ক্ষনে’ , ‘শরতের গ্রামীন জীবন’, ‘শাপলা তোলা’ মত বিখ্যাত সব ছবি।
১৯৫০ সালে ইউরোপ সফরের সময় যৌথ প্রদর্শনীতে তার ছবি সমকালনী বিশ্ববিখ্যাত চিত্র শিল্পী পাবলো পিকাসো, ডুফি, সালভেদর দালি, পলক্লী, কনেট, মাতিসের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। সুলতানই একমাত্র এশিয়ান শিল্পী যার ছবি এসব শিল্পীদের ছবির সঙ্গে একত্রে প্রদর্শিত হয়েছে। এছাড়া ১৯৭৬ সালে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে তার একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। মুলত এ প্রদশর্নীর মাধ্যমে এ দেশের সুশীল সমাজের তার নতুন ভাবে পরিচয় ঘটে।
এসএম সুলতানের শিশুদের নিয়ে ছিল আজীবনের লালিত স্বপ্ন। নিজের সঞ্চিত অর্থে শহরের মাছিমদিয়া এলাকায় চিত্রা নদীর পাড়ে নিজ বাড়িতে শিশুস্বর্গ নির্মাণ করে নৈৗকায় করে কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে নিয়ে প্রকৃতি দেখবেন। শিশুরা প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হবেন। প্রকৃতির ছবি আঁকবেন। কিন্তু তার সেই সাধ পূর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন শিল্পী সুলতান। মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে তার বর্ণিল ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতেন বরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতান। কৃষকের বিপুল শক্তিকে যিনি মহাকালের আর্কাইভে রেখে গেলেন এবং দেখিয়ে গেলেন দরিদ্র কৃষক দুর্বল নয়। সেই বৈষম্যবিরোধী সাম্য ও সুন্দরের স্বমিশ্রিত শিল্পভাষার মহান চিত্রশিল্পী সুলতানের আজ ১০১তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে এই মহান শিল্পীর বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা।
মন্তব্য করুন