মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

আসিয়ান সম্মেলনে উপেক্ষিত রোহিঙ্গা সংকট

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৪৫ পিএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম

মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু যেমন- সমুদ্রে উত্তেজনা, সীমান্ত বিরোধ, প্রতিবেশী দেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু বাদ পড়ে যায় রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুটি।

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ইস্যুটির ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ সংকটে রয়েছে। তবুও এই ইস্যুটি গুরুত্বই পায়নি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ান (ASEAN)-এর সম্মেলনে। আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কাউন্সিলের (এআরএনসি) সহ-সভাপতি নেই সান লুইন জার্মানি থেকে একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে এ ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

গত ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আসিয়ান সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়াসহ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রাজিল, কানাডা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বিশ্বের বড় শক্তিধর দেশগুলো অংশ নিয়েছে।

আরও অংশ নিয়েছেন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইএলও ও ফিফার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রধানরা।

এই সম্মেলনটি নানা কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনের সময়টাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন, শুল্কযুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতির মতো বিষয়গুলো সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ট্রাম্প থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনটিতে মূলত প্রাধান্য পেয়েছে বাণিজ্য ও অর্থনীতি। নেই সান লুইন বলেন, 'সবাই ব্যস্ত ছিল ট্রাম্প কী বলছেন তা শুনতে। ট্রাম্পও থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া শান্তি চুক্তির কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করছিলেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য তিনি কী করেছেন? তারা কি মর্যাদার সঙ্গে ও মৌলিক অধিকার নিয়ে বাঁচার অধিকার রাখে না?'

সম্মেলনের একটা ইতিবাচক দিক অবশ্য ছিল। মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

নেই সান লুইন জানান, মিয়ানমারের অনেক সংকটের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বহু পুরনো ও গভীর একটি সমস্যা। কিন্তু বিশ্বনেতারা একে পুরোপুরি ভুলে গেছেন বলে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

এছাড়া এবারের সম্মেলনে তিমুর-লেস্তে নতুন সদস্য দেশ হিসেবে যোগ দিয়েছে। চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিগুলো হালনাগাদ করা হয়েছে, যেন আসিয়ানকে গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নেওয়া যায়।

২০১৭ সালে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ২০২৪ সাল থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘর্ষে আরও দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা আবারও পালিয়ে যায়।

জাতিসংঘের হিসাবে, বর্তমানে মিয়ানমারে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ গৃহহীন বা বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছে। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করা জান্তা সরকার ও বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারণে সাধারণ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন।

বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা সতর্ক করেছে যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এবং বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য এই বছর ৯৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্যের চাহিদা ছিল। কিন্তু এর মাত্র ৩৮ শতাংশ পাওয়া গেছে।

আসিয়ান সম্মেলনে চার পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। কিন্তু সেই ঘোষণায় 'রোহিঙ্গা' শব্দটি একবারও উল্লেখ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের সহ-সভাপতি চার্লস সান্তিয়াগো।

সান্তিয়াগো মালয়েশিয়া থেকে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এর মানে আসিয়ান রোহিঙ্গা সংকটকে মিয়ানমারের সমস্যা বলে মনেই করছে না। অথচ এটা মিয়ানমারের সমস্যা হলেও এর প্রভাব পুরো অঞ্চলের ওপর পড়ছে।'

যদিও মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে অনেক রোহিঙ্গা আছে, তবু সবচেয়ে বেশি চাপে আছে বাংলাদেশ।

সান্তিয়াগো বলেন, 'আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে আসিয়ানের এই সংকট মোকাবিলায় দায়িত্ব নেওয়া উচিত। আসিয়ান তাদের সদস্য রাষ্ট্রে সংঘটিত গণহত্যাকে উপেক্ষা করতে পারে না।'

এদিকে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আসিয়ানের এ বিষয়ে কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন সান্তিয়াগো।

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অনেক মানবাধিকার সংগঠন বলেছে যে, গৃহযুদ্ধ চলাকালে এই নির্বাচন হবে প্রহসনমূলক এবং তারা কোনো নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠাবে না।

কিন্তু আসিয়ান শেষ পর্যন্ত সম্ভবত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে বলে মনে করছেন সান্তিয়াগো।

মালয়েশিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য সান্তিয়াগো বলেন, 'এভাবে আসিয়ান রোহিঙ্গা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করা মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করছে।'

তিনি আসিয়ানকে অনুরোধ করেন, 'শুধু কথায় নয়, বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা অন্যান্য শরণার্থীদের রক্ষা করতে হবে। গণহত্যার বিরোধিতা করতে হবে।'

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘অধিকৃত অঞ্চল’ হিসেবে উপস্থাপন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন
সরকারের বিবৃতি / পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘অধিকৃত অঞ্চল’ হিসেবে উপস্থাপন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন
জলবায়ু তহবিলের ৮৯১ প্রকল্পে ২১১০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি: টিআইবি
জলবায়ু তহবিলের ৮৯১ প্রকল্পে ২১১০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি: টিআইবি
ইসির নিবন্ধন পাচ্ছে এনসিপিসহ তিন দল: ইসি সচিব
ইসির নিবন্ধন পাচ্ছে এনসিপিসহ তিন দল: ইসি সচিব
‎আগামী সাপ্তাহে ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনার বিচার হবে 
‎আগামী সাপ্তাহে ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনার বিচার হবে