
		নতুন আরেক ইতিহাস রচনা করলো ইংলিশ ক্লাব চেলসি। মেটলাইফ স্টেডিয়ামের ফাইনালে বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা ছুঁয়ে দেখেছে দলটি। নতুন ফরম্যাটের প্রথম ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছে।
সেমিফাইনালে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল পিএসজি। তাই অনেকেই ফাইনালে তাদের পরিষ্কার ফেবারিট হিসেবেই মেনে নিয়েছিল। তবে চেলসি অধিনায়ক হুঙ্কার ছুঁড়ে বলেছিলেন, ‘আমরা রিয়াল মাদ্রিদ নই।’
ফাইনালে সেটাই অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করল চেলসি। গোল খাওয়া তো দূরে থাক, চেলসি লা প্যারিসিয়েনদের সুযোগই তৈরি করতে দেয়নি। বরং কোল পালমার ও এনজো ফার্নান্দেজের মিডফিল্ড জুটিতে খাবি খেয়েছে পিএসজির মিডফিল্ড ও ফ্রন্টলাইন।
প্রথমার্ধেই ফরাসি ক্লাবটিকে একপ্রকার ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় চেলসি। ম্যাচের ২২ ও ৩০ মিনিটে ইংলিশ মিডফিল্ডার পালমার জোড়া গোল করে ব্লুজদের ম্যাচে চালকের আসনে বসান। আর ৪৩ মিনিটে পালমারের পাসেই দারুণ ফিনিশিংয়ে পিএসজিকেই যেন ‘ফিনিশ’ করে দেন জোয়াও পেদ্রো।
এর আগে ২০২২ সালেও ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল চেলসি। তবে বড় পরিসরে আয়োজিত নতুন ফরম্যাটের টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাহাত্ম্য নিশ্চয়ই বেশি।
খেলার প্রথমার্ধ শেষে মঞ্চে পারফর্ম করেন আমেরিকান র্যাপার দোজা ক্যাট ও কলম্বিয়ান গায়ক জে বালভিন। নিউ জার্সির মেট লাইফ স্টেডিয়ামে এমন উৎসবেও গ্যালারিতে ৮১ হাজার দর্শকের মাঝে অনেকের মুখ ভার। কিছুক্ষণ আগে মাঠে প্রথমার্ধে তাঁরা যা দেখেছেন, স্রেফ অবিশ্বাস্য। একই কারণে আবার গ্যালারিতে কারও কারও মুখে হাসি থামছেই না। সেই হাসির রঙ নীল, পিএসজি সমর্থকদের বুকে বিঁধেছে ‘নীল’ বেদনা হয়ে। চেলসির কিছু সমর্থক মাথায় হাত রেখে হাসছিলেন। ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রথমার্ধে যে তাঁদের কারও কারও কল্পনাকেও হার মানিয়েছে; ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজির বিপক্ষে চেলসি ৩-০ গোলে এগিয়ে!
সেমিফাইনালে এই পিএসজিই রিয়াল মাদ্রিদের জালে প্রথমার্ধেই ৩ গোল করেছিল। সব মিলিয়ে প্রতিপক্ষের জালে ১৬ গোলের বিপরীতে মাত্র এক গোল হজম করে উঠে এসেছিল ফাইনালে। ফাইনালে পিএসজি যেন চেলসির কাছ থেকে সেমিফাইনালেরই কার্বন-কপি ‘উপহার’ পেয়েছে প্রথমার্ধে। পরের অর্ধে আর গোল না হলেও পিএসজি অক্ষত থাকেনি; মাঠ ছেড়েছে ১০ জন নিয়ে, কাঁধে ৩-০ গোলে হারের বোঝা।
৮৫ মিনিটে চেলসি লেফট ব্যাক মার্ক কুকুরেল্লার চুল টেনে তাঁকে ফেলে দিয়ে লাল কার্ড দেখেন পিএসজির মিডফিল্ডার হোয়াও নেভেস। প্রথমার্ধে জোড়া গোল করেন চেলসি তারকা কোল পালমার। হোয়াও পেদ্রোকে দিয়েও গোল করান তিনি।
যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গিয়েছিলেন ফাইনাল দেখতে। বেশ গরমের মধ্যে পিএসজিকে শুরু থেকেই চেপে ধরে চেলসি। প্রথম ৮ মিনিটের মাথায় পালমারের হালকা বাঁকানো শট পিএসজির পোস্টকে চোখ রাঙিয়ে যায়। ২২ ও ৩০ মিনিটে পালমারের গোল দুটি প্রায় একই রকম।
চেলসি রাইট ব্যাক মালো গুস্তোর শট নিতে না পেরে পালমারকে দেন। বক্সের মাথা থেকে বাঁ পায়ের নিচু শটে গোল করেন চেলসি মিডফিল্ডার। ৮ মিনিট পর সেন্টার ব্যাক লেভি কোলউইলের পাস পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড়ে পিএসজির বিপদসীমায় ঢুকে পড়েন পালমার। এবারও তাঁর বাঁ পায়ের শটে পরাস্ত দোন্নারুম্মা। তবে দুটি ভালো সেভও করেছেন এই ইতালিয়ান।
পেদ্রোর ফিনিশের সামনে দোন্নারুম্মার অবশ্য কিছু করার ছিল না। পালমারের ডিফেন্স চেরা পাস দৌড়ে ধরেন চেলসির ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। ঝুঁকে পড়া দোন্নারুম্মাকে সামনে পেয়ে তাঁর কাঁধের ওপর দিয়ে বল পাঠিয়েছেন জালে।
পিএসজি যে গোলের সুযোগ পায়নি তা নয়। চেলসি গোলকিপার রবার্ট সানচেজ মোট ৬টি সেভ করেছেন। বিরতির পর ওসমান দেম্বেলে ও খিচা কাভারাস্কাইয়ার শটে দারুণ সেভ করেন সানচেজ। প্রথমার্ধে দুই দল সমতায় থাকতে পিএসজির নেভেস ও দেজিরে দুয়েও গোলের সুযোগ নষ্ট করেন।
ম্যাচের শেষ দিকে একটু উত্তেজনায় ভুগতে দেখা যায় দুই দলকেই। বিশেষ করে ভিএআরের মাধ্যমে নেভেস লাল কার্ড দেখার পর। শেষ বাঁশি বাজার পর সেটাই সংক্রমিত হয় পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে, দোন্নারুম্মা ও চেলসি খেলোয়াড়দের মধ্যে। ইংলিশ ক্লাবটির কয়েকজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন এনরিকে ও দোন্নারুম্মা। এ সময় চেলসির পেদ্রোর কাঁধ ধরতেও দেখা গেছে পিএসজি কোচ এনরিকেকে।
এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ, লিগ ও ফ্রেঞ্চ কাপজয়ী পিএসজির সামনে সুযোগ ছিল ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে ‘পারফেক্ট’ভাবে শেষ করার। কিন্তু প্রথমার্ধেই ম্যাচ হেরে বসায় মেজাজটা সম্ভবত পরে আর ধরে রাখতে পারেননি পিএসজির স্প্যানিশ কোচ। ২০১১ সালে পিএসজি কাতারি মালিকের অধীনে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত তিনবার ম্যাচে প্রথমার্ধে ন্যূনতম ৩ গোলে পিছিয়ে পড়ল। লিঁও ও এঁমসের বিপক্ষে আগের দুবার জিতলেও এবার আর পারল না।
গত মে মাসে কনফারেন্স লিগ ফাইনালেও চেলসির শিরোপা জয়ে দুটি গোল করান পালমার। ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে মৌসুম শেষ করতে পারাটা মধুর হলো তাঁর জন্য। এ মৌসুমে ৫২ ম্যাচে ১৮ গোলের পাশাপাশি ১৪ গোল করানো পালমার জয়ের পর সম্প্রচারক ডিএজেডএনকে বলেছেন, ‘দারুণ লাগছে। বেশি ভালো লাগছে এই কারণে যে, ম্যাচের আগে সবাই আমাদের নিয়ে সন্দেহে ভুগেছে। আমরা এটা জানতাম, তাই এভাবে খেলতে পেরে ভালো লাগছে।’
চেলসি কোচ মারেসকার প্রশংসাও করেন পালমার, ‘তিনি দারুণ পরিকল্পনা করেছেন। জানতেন (খেলার) জায়গা পাওয়া যাবে কোথায়। আমাকে যতটা সম্ভব মুক্তভাবে খেলার সুযোগ দিয়েছেন। প্রতিদানে গোল করেছি।’
মন্তব্য করুন