
ডাউনহিল স্কেটবোর্ডিং দুনিয়ার এক উজ্জ্বল নাম ডিয়েগো পনসেলেট। তার অসাধারণ স্কেটবোর্ডিংয়ের দক্ষতায় মুগ্ধ দর্শকেরা। ছোটখাট বাধা বিপত্তি আর দুর্ঘটনা এড়িয়ে আজ তিনি এক অসামান্য স্কেটবোর্ডার। পাহাড়ি রাস্তায় ঝড়ের গতিতে স্কেটিং করতে দেখা যায় এ বিশ্বসেরা খেলোয়ারকে।জন্ম ১৯৯৯ সালে মেক্সিকো সিটিতে, তবে বেড়ে উঠেছেন স্পেন ও সুইজারল্যান্ডে। মা স্প্যানিশ, আর বাবা বেলজিয়ান। ছোটবেলা থেকেই ডিয়েগো ছিলেন অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। আর তার এই অ্যাডভেঞ্চারের জন্যই কেউ যখন তাকে ‘পাগল’ বলত, তখন তিনি সেটা নিতেন গর্ব হিসেবে। প্রথমে ডিয়েগোর ঝোঁক ছিল মোটররেসিং আর স্কিইংয়ের দিকে, কিন্তু একদিন সব বদলে যায়। ছোটবেলায় রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে তিনি একজন স্কেটারকে ভয়ঙ্কর ঢালে ঝড়ের মতো নামতে দেখেন। তিনি ভাবলেন, নিশ্চয়ই নিচে গিয়ে ছিটকে পড়বেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন, কিছুই হয়নি। ব্যস, সেদিন থেকেই মাথায় ঢুকে যায় এই খেলা তাকে খেলতেই হবে।
ডিয়েগো যখন কিশোর, তখন পাহাড়ি রাস্তায় স্কেটিং করা কিছু মানুষের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারাই শেখায় কীভাবে বোর্ডের সঙ্গে এক হয়ে গতি আর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ধীরে ধীরে সেই কিশোর ডিয়েগো পরিণত হন স্কেটিংয়ের মাস্টার হিসেবে।
তবে ২০১৭ সালে এক পা ভাঙার ঘটনাই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তখনই তিনি সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করেন—একদিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবেন। শুরু হয় রীতিমতো যুদ্ধ। প্রথমদিকে খুব বেশি সাফল্য আসেনি। কিন্তু ধৈর্য হারাননি। বারবার হেরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়েই নিজেকে গড়ে তোলেন।
অবশেষে ২০২২ সালে, করোনা মহামারির পর প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে বাজিমাত করেন। ৯টি রেসে অংশ নিয়ে ৭টি জেতেন। ফাইনালে ভয়ঙ্কর এক ওভারটেক করে জয় ছিনিয়ে আনেন। পরের বছর তুরস্কে আবারও হন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন । এখন ডিয়েগোরে লক্ষ্য আরও বড়, স্কেটবোর্ডিংয়ে সর্বোচ্চ গতি রেকর্ড ঘন্টায় ১৪৬.৭৩ কিলোমিটার, যা ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি করা।
স্কেটবোর্ডিংয়ের বাইরেও ডিয়েগো একজন দারুণ গল্পবলা মানুষ। চলচ্চিত্রে আগ্রহ আছে, বানিয়েছেন শর্ট ফিল্ম—যেখানে তিনি তার কমিউনিটির কিছু মানুষকে তুলে ধরেছেন। লন্ডন থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন। তার দৃষ্টিভঙ্গি এখন শুধু খেলা নয়, বরং বিশ্ব আর সমাজের দিকেও বিস্তৃত।
মন্তব্য করুন