
		ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের জন্মদিন আজ। ১৯০৮ সালের ২৭ আগস্ট আজকের দিনে অষ্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। ডন ব্র্যাডম্যানকে বলা হয় সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে তার ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড় এখনও অক্ষত।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২১ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ডন ব্র্যাডম্যানের। বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ৫২টি টেস্ট ম্যাচে ২৯টি শতক এবং ১৩টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড়ে ৬,৯৯৬ রান করেছেন। ২৯টি শতকের মধ্যে ১২টি দুশ এবং দুটি তিনশ রানের ইনিংস খেলেছেন ডন।
ব্র্যাডম্যান টেস্ট ক্রিকেটে প্রতি ২.৭৬ ইনিংসে একটি শতক হাঁকিয়েছেন এবং প্রতি ৬.৬৬ ইনিংসে একটি দ্বিশতক হাঁকিয়েছেন। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং গড় যে ৯৯.৯৪ সেটা অধিকাংশ ক্রিকেট প্রেমীদেরই জানা। শেফিল্ড শিল্ডে ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং গড় ৯৬ ম্যাচে ১১০.১৯ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার ব্যাটিং গড় ২০১.৫০!
৫২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২৯টি শতরান রয়েছে ক্রিকেটীয় ইতিহাসে। তাঁর ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪। ব্র্যাডম্যান কী ছিলেন, তা বুঝতে পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। ব্যাটিংয়ের মতো ভাগ্যনির্ভর অনিশ্চিত একটা কাজকে এমনই দুই আর দুইয়ে চারের মতো বানিয়ে ফেলেছিলেন যে ভাবলে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়। ৩৩৮টি প্রথম শ্রেণির ইনিংসের ২২১টিতে সেঞ্চুরি পাননি। সেই ইনিংসগুলোর গড় ৫৮.২০! যা জ্যাক হবস, ওয়ালি হ্যামন্ড, রণজিৎ সিংজি, সিবি ফ্রাই, গ্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস ও জিওফ বয়কটের মতো গ্রেটদের সেঞ্চুরিসহ ব্যাটিং গড়ের চেয়েও বেশি!
টেস্টে ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড়ের মতো ইংল্যান্ডে প্রথম সফরে ব্র্যাডম্যানের দুটি রেকর্ডও একই রকম অমরত্ব পেয়ে গেছে। এক সিরিজে সর্বোচ্চ রানের (৫ টেস্টে ৯৭৪) রেকর্ডের চেয়েও হয়তো বেশি বিস্ময়কর লিডসে এক দিনে ৩০৯। লাঞ্চের সময় ১০৫ রানে অপরাজিত, চা–বিরতির সময় ২২০-টেস্টের প্রথম দিনের দুই সেশনেই সেঞ্চুরি। দিন শেষে ৩০৯ রানে অপরাজিত ব্র্যাডম্যান নাকি বলেছিলেন, ‘নাইস ওয়ার্ক আউট ফর টুমরো। পরের দিন অবশ্য ৩৩৪ করে আউট হয়ে যান। অ্যান্ডি স্যান্ডহামের ৩২৫-কে অতীত করে দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ স্কোরের নতুন বিশ্ব রেকর্ড। ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ায় শেফিল্ড শিল্ডে ৪৫২ করে গেছেন। টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের দুটি রেকর্ডই তখন ব্র্যাডম্যানের। একসঙ্গে এই দুটি রেকর্ডের মালিক আর একজনই হতে পেরেছেন। তাঁর নাম ব্রায়ান লারা।
১৯৩০ ইংল্যান্ড সফরে ওই ধ্বংসযজ্ঞ দেখার পর শুধু ব্র্যাডম্যানকে ঠেকাতেই বডিলাইন বোলিংয়ের জন্ম। লেগের দিকটা ফিল্ডারে জনাকীর্ণ করে ব্যাটসম্যানদের শরীর তাক করে ক্রমাগত আক্রমণ। হ্যারল্ড লারউড নামে আগুনে গোলা হাতে থাকায় ডগলাস জার্ডিন সেই কৌশলে সফলও হন। ওই একটা সিরিজেই ব্র্যাডম্যান ‘ব্যর্থ’। ব্যর্থ; কারণ, তাঁর গড় নেমে এসেছিল ৫৬.৫৭-তে। যে গড় অন্য সব ব্যাটসম্যানকে গ্রেটনেসের স্বীকৃতি দেয়।
১৯৯৭ সালে সহধর্মিণীর মৃত্যুর পর ব্র্যাডম্যান শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। পরের বছর তিনি তার ৯০তম জন্মদিনে আধুনিক ক্রিকেটে তার পছন্দের দুজন ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন এবং শচীন টেন্ডুলকারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ২০০০ সালের ডিসেম্বরে নিউমোনিয়া জনিত সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। নতুন বছরে ঘরে ফেরার পর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ব্র্যাডম্যান। ২০০১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাউথ অস্ট্রেলিয়ার কেনসিংটন পার্কে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
                    
মন্তব্য করুন