
		ছাত্রীকে মারধরের জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গেট এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সাকিফা খাতুন নামে এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের কাছে একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। তিনি দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনি ওই ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে ভবনের দারোয়ান তাঁকে মারধর করেন। এ সময় ২ নম্বর গেটে থাকা শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা তাঁকে ধাওয়া করলে স্থানীয়রা ইট-পাটকেল মারা শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, আমি প্রতিদিন সময় মতো বাসায় আসি। আজকেও দেরি করিনি। ১২টার মধ্যে চলে আসি। দারোয়ানকে দরজা খুলতে বললে তিনি খুলছিলেন না। পরে জোরে ডাক দিলে তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। আমি জবাব দিতে গেলে হঠাৎ আমার গলায় চড় মারেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার রুমমেটরা নামলে তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং লাথি মারতে থাকেন। আমি আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে আমার রুমমেট ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন।
ঘটনাস্থলে থাকা শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, স্থানীয়দের হামলায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আল মাসনূন রয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক সাব্বির হোসেন বলেন, মাসনূনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে।
আহত অনেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হয়। সেখানে উপস্থিত চিকিৎসক মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, এখানে ২৩ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত অবস্থায় এসেছে। তাদের আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। আর মোট আহত শিক্ষার্থী এক শ–র বেশি হবে। এত বেশি শিক্ষার্থী এসেছে যে আমরা সবার নাম তালিকায় লিখতে পারিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. কোরবান আলী এবং সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইনের সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে রাত পৌনে ১টার দিকে উপস্থিত হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় দুই নম্বর রাস্তায় ঢুকতে পারেননি তাঁরা। পুরোটা স্থানীয়দের দখলে ছিল। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসেন।
এর আগে মধ্যরাত সোয়া তিনটার দিকে সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ বলেন, আমি ক্যাম্পাসে নেই। তবে যতটুক জানতে পারলাম সহকারী প্রক্টর নাজমুল এবং কোরবান স্যার-দুজনই আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ভোর ৫টার দিকে সেনা কর্মকর্তা মেজর শাহরিয়ার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন,আমরা ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় দুই নম্বর গেটের ভেতর থেকে ১০ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছি। ভেতরে আমাদের আরেক গ্রুপ রয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। সকালে আবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
মন্তব্য করুন