
		কাঙ্ক্ষিত 'শাপলা' প্রতীক ঘিরে তৈরি হওয়া জটিলতা নিরসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজধানী ঢাকায় বৃহত্তর রাজনৈতিক জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতীকটির বিকল্প নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা না করে, এনসিপি তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে শক্ত অবস্থান তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা ঘোষণা করেছেন যে, শাপলা প্রতীক না পাওয়ার ইস্যুটি কোনো আইনি পথে সমাধান না করে, তারা এটিকে রাজনীতির ময়দানে টেনে আনবেন। তাদের ভাষ্য, শাপলা প্রতীক সংক্রান্ত ইসির এই সিদ্ধান্ত কেবল একটি প্রতীকের বিষয় নয়, এর সাথে দলের রাজনৈতিক অধিকার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগের মতো গুরুতর প্রশ্ন জড়িয়ে আছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে দলটির টানাপোড়েন বাড়লেও শেষমেশ রাজনৈতিক লড়াইয়ে যেতে হবে বলে মনে করছেন নেতারা। শাপলার বিকল্প ভাবছে না তারা, বরং এ প্রতীক নিয়ে রাজপথে শক্ত উপস্থিতি দেখাতে চায়। যতদিন ‘শাপলা’ না দেবে, ততদিন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে দলটি।
এনসিপি-এর একাধিক নেতার মতে, ইসি যদি শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না করে, তবে এটিকে তারা দলটিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করার একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে ধরে নেবে। প্রতীকটি বাতিল করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনি ব্যাখ্যা চেয়ে ইসির কাছে চিঠি দেওয়া হলেও, আগামী সপ্তাহ থেকেই শাপলার জন্য কর্মসূচি আসছে বলে জানানো হয়েছে। দ্বন্দ্ব তীব্র হওয়ায় শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক লড়াই-ই হবে সমাধান—এমনটাই মনে করছেন এনসিপি নেতৃত্ব।
গত ১৯ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। এনসিপি-এর দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে এই আলোচনায় অংশ নেন। ঘণ্টাখানেকের এই আলোচনায় শুধুমাত্র 'শাপলা' প্রতীক নিয়েই আলোচনা হয়। ইসি অন্য কোনো প্রতীক গ্রহণের কথা বললেও এনসিপি তাদের অবস্থানে অটল থাকে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, নির্বাচন কমিশন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে। এনসিপি সাদা শাপলা বা লাল শাপলা প্রতীক চেয়ে এসেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ইসি এই পর্যন্ত প্রতীকটি দেবে না—এমন কথা বলেনি। তবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিছুদিন আগে প্রতীক বাড়াতে বা কমাতে পারেন বলে মন্তব্য করেছিলেন।
প্রতীকটির বিকল্প নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা নেই বলে জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ইসির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, 'আমরা বিকল্প কেন নেব? এটার আইনগত তো ব্যাখ্যা লাগবে। আমরা দেখেছি, এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যাখ্যা, কোনো কিছুই নির্বাচন কমিশন আমাদের দিতে পারেনি।'
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিভিন্ন সংস্থা ও অন্য রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে এনসিপি-কে ভিন্ন প্রতীক গ্রহণে সম্মত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার মতে, এনসিপি-কে কী প্রতীক দেওয়া হবে বা হবে না, তা নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলের আগ্রহ থাকা একটি 'শঙ্কার কারণ'।
যদিও এনসিপি প্রথমে শাপলা, কলম ও মোবাইল ফোন—এই তিনটি প্রতীক প্রস্তাব করেছিল, বর্তমানে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শাপলাতেই আটকে আছেন এবং বিকল্প প্রতীক নিয়ে আর ভাবতে চাইছেন না। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে একাধিকবার চিঠি আদান-প্রদানও হয়েছে।
এনসিপি-এর যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, ‘আগামী সপ্তাহে ঢাকায় বড় কর্মসূচি করার পরিকল্পনা আছে। শাপলা প্রতীক না দিলে আইনি লড়াই করব না, রাজনৈতিকভাবেই বিষয়টি মোকাবেলা করব।’
মন্তব্য করুন