
		হাসির সংক্রমণ অনেকটাই ভাইরাসের মতো। ভাবুন তো-আপনি বাসে উঠেছেন। হঠাৎ পেছনে থাকা একজন অদ্ভুতভাবে হেসে উঠল। আপনি জানেন না সে কেন হাসছে, কিছুই বুঝতে পারছেন না। কিন্তু কেমন যেন এক অদ্ভুত টান, আপনি নিজেও হেসে ফেললেন কিন্তু কেন আপনিও হাসলেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতেই চলুন ডুব দেওয়া যাক-হাসির বিজ্ঞানে।
আয়না নিউরনের জাদু : আপনার মস্তিষ্কে রয়েছে কিছু বিশেষ কোষ, যাদের বলা হয় আয়না নিউরন।এই নিউরনগুলো তখনই সক্রিয় হয়, যখন আপনি অন্য কারো কিছু করতে দেখেন-হাসা, কাঁদা, ব্যথা পাওয়া বা আনন্দ করা।
যখন আপনি কাউকে হাসতে দেখেন, আপনার এই আয়না নিউরনগুলো নিজেও যেন সেই হাসি ‘অনুভব’ করে।ফলাফল? আপনার মুখে নিজে থেকেই ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি। এটা হচ্ছে একধরনের `নিউরোলজিকাল প্রতিক্রিয়া' যা মানুষকে মানুষ হিসেবে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে।
হাসি এক সামাজিক হাতিয়ার: হাসি আসলে এক ধরণের সামাজিক সংকেত। আমরা যখন একসাথে হাসি, তখন আমাদের ব্রেইনে নিঃসৃত হয় অক্সিটোসিন আর এন্ডোরফিন নামক হরমোন।এসব হরমোন আমাদের ভালো লাগা, নিরাপত্তা ও বন্ধন অনুভব করায়। তাই সমাজে হাসি ছড়ানো মানে শুধু মজা নয়-এটা মানুষকে একসাথে রাখার প্রাকৃতিক উপায়।বিজ্ঞানীরা বলেন, এটি একধরনের `social glue' যা সম্পর্ককে জোড়া দিয়ে রাখে।
বিবর্তনের ইতিহাসে হাসি : হাসি শুধু মানুষের মাঝে নয়, প্রাণিজগতেও দেখা যায়।চিম্পাঞ্জি, বনোবো-এমনকি ইঁদুর পর্যন্ত খেলতে গিয়ে একধরনের শব্দ করে, যা অনেকটা হাসির মতো।তাদের মধ্যে এই আচরণ যোগাযোগের একটি নিরাপদ উপায়। যেমন, `আমি আক্রমণ করছি না, খেলছি মাত্র! মানুষের বিবর্তনে এই আচরণ আরও জটিল হয়ে ওঠে, এবং আমাদের সমাজে হাসি হয়ে ওঠে একটি অব্যর্থ সামাজিক টুল।একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাচীন মানুষরা দলের মধ্যে হাসিকে ব্যবহার করত ঝগড়া থামাতে বা ভয় কাটাতে।
হাসির সংক্রমণ ভাইরাসের মতো : অনেক বিজ্ঞানী বলেন, হাসি এক ধরনের “সামাজিক ভাইরাস”।একবার কেউ ছড়িয়ে দিলে, এটা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে-চোখ, মুখ, কণ্ঠস্বর… সব মিলিয়ে একটা অসাধারণ দ্যুতি একটি বিখ্যাত গবেষণায় দেখা যায়, একজন ব্যক্তি যদি কোনো বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে হাসে, সেই প্রভাব বন্ধুর বন্ধুর মধ্যেও পৌঁছে যেতে পারে!অর্থাৎ, আপনার হাসি এমন একজনকে প্রভাবিত করতে পারে, যাকে আপনি কখনো দেখেননি।
হাসি যখন থেরাপি : আপনি কি জানেন, হাসি শরীরের জন্যও ওষুধের মতো কাজ করে? .এটি স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ইমিউন সিস্টেমকে করে আরও সক্রিয়, এমনকি ব্যথার অনুভূতিও কমায়! তাই তো এখন “laughing therapy” বা হাসির মেডিটেশন ক্লাস বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আপনার হাসি শুধু আপনার জন্য নয়-আপনার চারপাশের মানুষের জন্যও একপ্রকার ঔষধ।
হাসি হল আমাদের মস্তিষ্ক, সমাজ এবং বিবর্তনের এক চমৎকার উপহার।এটা সংক্রামক-কারণ আমরা একা থাকার জন্য তৈরি হইনি।তাই, কেউ হেসে উঠলে নিজেকে আটকে রাখবেন না… হাসুন, সংক্রামিত করুন, কারণ এটা ভালো কিছু ছড়ায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, হাসি নিছকই একটি মুখভঙ্গি নয়, এটি আমাদের স্নায়বিক, আবেগীয় এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার এক জটিল সমন্বয়। হাসি সংক্রামক কারণ এটি আমাদের মস্তিষ্কের গঠন, আবেগীয় সংবেদনশীলতা এবং সামাজিক প্রবৃত্তির গভীরে প্রোথিত। পরের বার যখন আপনি কাউকে হাসতে দেখবেন, তখন হাসিতে যোগ দিতে দ্বিধা করবেন না। কারণ সেই হাসি কেবল আপনার মুখেই নয়, আপনার মন এবং অন্যদেরও আলোকিত করবে।হাসি-একমাত্র ভাইরাস যা আমরা চাই সবার মধ্যে
মন্তব্য করুন