মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

তার ছাড়াই বিদ্যুৎ

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২৯ এএম

ভাবুন তো, আপনি বসে আছেন একটি দুর্গম পাহাড়ের কুটিরে, যেখানে নেই কোনো বিদ্যুতের লাইন তবুও, আলো জ্বলছে, ফ্যান চলছে, এমনকি ফোন চার্জও হচ্ছে—একটা তার ছাড়াই! প্রযুক্তির এই দ্রুতগতির যুগে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিষ্কারের সাক্ষী হচ্ছি। কিন্তু এমন একটি আবিষ্কারের কথা ভাবুন যা আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ধারণাকেই সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, তারবিহীন বিদ্যুৎ প্রেরণ, এখন আর কোনো কল্পনা নয়, বরং এক বাস্তব সত্য! যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডারপা সম্প্রতি এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে ।

ভাবতে অবাক লাগে, তাই না? ৯ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত তার ছাড়াই বিদ্যুৎ পাঠানো! এই যুগান্তকারী সাফল্য বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে। ডারপার এই অর্জন স্মার্ট সিটি, মহাকাশ যান, সামরিক ঘাঁটি এমনকি আমাদের দুর্গম এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় এক নতুন বিপ্লব আসতে চলেছে।

কিন্তু এই অলৌকিক কাজটা কীভাবে সম্ভব হলো? ডারপার পাওয়ার প্রোগ্রামের অধীনে, তারা একটি দারুণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। প্রথমে উচ্চক্ষমতার বিদ্যুৎকে লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে আলোর বিমে রূপান্তরিত করা হয়। এরপর এই আলোর বিমকে বহু দূরের গ্রাহকের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে রয়েছে বিশেষ ফটোভোল্টেইক সেল, যা এই আলোক শক্তিকে আবার বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে। ডারপার দাবি, তারা ২০২৫ সালের মে মাসে ৮.৬ কিলোমিটার দূরে ৮০০ ওয়াটেরও বেশি শক্তি পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি মজার বিষয় হলো, তারা পরীক্ষায় লেজারের শক্তি ব্যবহার করে দূরবর্তী এক স্থানে পপকর্ন পর্যন্ত তৈরি করে এর কার্যকারিতা দেখিয়েছে!

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এমন ধারণার জন্ম কি আগে হয়েছিল? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন! উনবিংশ শতকে মহান বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা প্রথম এমন তারবিহীন বিদ্যুৎ প্রেরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল গোটা বিশ্বে তার ছাড়াই বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু সেই সময়ে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁর এই স্বপ্ন সফল হয়নি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর, ডারপার এই গবেষণা সেই ঐতিহাসিক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিল। টেসলার স্বপ্ন অবশেষে একবিংশ শতাব্দীতে এসে পূর্ণতা পেল।

যদিও এই প্রযুক্তি এখনও তার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এর সম্ভাবনা অপরিসীম। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপত্তা এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ উচ্চশক্তির লেজার ভুল লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছালে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে যথাযথ নিরাপত্তা প্রোটোকল এবং অবকাঠামো নিশ্চিত করা গেলে, এই প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে আগামী দিনের বিপ্লবী শক্তি সমাধানে পরিণত হবে।

আমরা এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছি, যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে আরও সহজ, আরও কার্যকর। তারবিহীন বিদ্যুৎ—শুনতে যেন কল্পকাহিনি। কিন্তু এখন, তা আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে।যদি এই প্রযুক্তি নিরাপদ ও কার্যকরভাবে বিস্তৃত করা যায়, তাহলে আমরা এমন এক বিশ্ব পেতে পারি যেখানে বিদ্যুৎ থাকবে সর্বত্র—বিনা বাধায়, বিনা তারে, বিনা সীমায়। আর সেই ভবিষ্যৎ, খুব বেশি দূরে নয়।

ডারপার এই আবিষ্কার আমাদের দেখিয়ে দিল যে মানুষের অদম্য ইচ্ছা আর প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে। তারবিহীন বিদ্যুৎ শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, এটি এমন এক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত যেখানে শক্তি হবে আরও সহজলভ্য, আরও সুগম।

এই নতুন দিগন্তের উন্মোচন আমাদের জীবনযাত্রায় এক বিশাল পরিবর্তন আনবে বলেই আশা করা যায়। আপনি দেখছেন, টেসলার স্বপ্ন আজ বাস্তবের খুব কাছাকাছি। কে জানে, আগামী কয়েক বছরে হয়তো বিদ্যুৎ আসবে আমাদের ঘরে… বাতাসের পথেই।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বৃষ্টি জলপ্রপাতের মতো না পরে ফোঁটায় ফোঁটায় পরে কেন ?
বৃষ্টি জলপ্রপাতের মতো না পরে ফোঁটায় ফোঁটায় পরে কেন ?
ফেনীর ছিন্নমূল মানুষের ভরসা ‘ইচ্ছেমতো দামের হোটেল’ 
ফেনীর ছিন্নমূল মানুষের ভরসা ‘ইচ্ছেমতো দামের হোটেল’ 
নেদারল্যান্ডসকে কেন সাইকেলের দেশ বলা হয় ?
নেদারল্যান্ডসকে কেন সাইকেলের দেশ বলা হয় ?
মুভি দেখার সময় সবাই পপকর্ন কেন খায় ?
মুভি দেখার সময় সবাই পপকর্ন কেন খায় ?