
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সুদানের এল-ফাশার শহরে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) সন্ত্রাসীদের নৃশংস অপরাধের খবরাখবরের মধ্যে ‘আবু লুলু’ নামে এক সন্ত্রাসীর নাম এখন সবার মুখে মুখে।
এই আধাসামরিক কমান্ডার নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ২ হাজারেরও বেশি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। আরএসএফ এই নেতা এখন পরিচিত হয়ে উঠেছেন ‘এল-ফাশারের কসাই’ নামে।
সাম্প্রতিক হত্যাযজ্ঞে তিনি নিজ হাতে হাজারো মানুষ হত্যা করেছেন এবং সেই ভয়ংকর দৃশ্য সরাসরি টিকটকে প্রচার করেছেন।
এক লাইভে তিনি অকপটে বলেন, ‘আমি ২,০০০ মানুষ হত্যার লক্ষ্য নিয়েছিলাম। হয়তো তার চেয়েও বেশি হয়েছে, হিসাবটা হারিয়ে ফেলেছি।’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘আমি সংখ্যাটা ভুলে গেছি, কিন্তু আমি আবার শূন্য থেকে শুরু করব।’
তার এই বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। টিকটক পরে তার অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করে।
তার প্রকৃত নাম আল-ফাতেহ আবদুল্লাহ ইদরিস। রাজধানী খারতুমে একাধিক যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। হত্যার পর তিনি গর্বের সঙ্গে বেসামরিক নাগরিকদের সেসব ছবি প্রকাশ করেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আরএসএফ নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো (হেমেদতি) এবং সুদানের সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। চলমান সেই সংঘাতের অংশ হিসেবে আরএসএফ গত সপ্তাহে উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশার শহর দখল করে নেয় এবং এরপরই স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়।
পরবর্তী সময়ে তার ভিডিও প্রকাশ পায়, আরএসএফের আবু লুলু নামের এক কমান্ডার শহরে ঠান্ডা মাথায় একে একে মানুষকে গুলি করে হত্যা করছেন। তিনি জিম্মিদের হত্যা করছেন এবং সাধারণ মানুষকে সরাসরি গুলি করছেন।
২০১৩ সালে আরএসএফে যোগ দেন আবু লুলু। তিনি হেমেদতির পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ও মাহারিয়া রিজেইগাত গোত্রের সদস্য। পারিবারিক প্রভাব ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই তিনি দ্রুতই আরএসএফের বিশেষ বাহিনীতে পদোন্নতি পান। সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে ইয়েমেনেও একাধিকবার পাঠানো হয় তাকে। পরে তিনি গোয়েন্দা শাখায় কাজ করেন, যা তাকে সংগঠনের অভ্যন্তরে আরো প্রভাবশালী করে তোলে।
আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর সংঘাত শুরু হলে তিনি হেমেদতির ভাই ও আরএসএফের উপনেতা আবদেল রহিম দাগালোর দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
গত সপ্তাহে আরএসএফ নেতা হেমেদতি স্বীকার করেন যে এল-ফাশারে ‘কিছু লঙ্ঘন’ ঘটেছে এবং দাবি করেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর আরএসএফ-এর প্রকাশিত এক ছবিতে লুলুকে গ্রেপ্তারের পর হাতকড়া পরানো অবস্থায় দেখা গেছে।
আরএসএফের অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে একই দিনে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নেতৃত্বের নির্দেশে আবু লুলু ও এল-ফাশারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি বিবৃতিতে দাবি করেছে, আবু লুলুর সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।
মন্তব্য করুন