
		মূত্রথলির ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা এখনও অনেক কম। অথচ সময়মতো রোগটি ধরা না পড়লে শেষপর্যন্ত মূত্রথলি পুরোপুরি ফেলে দেওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এমন বিপদ হওয়ার আগে মূত্রথলির ক্যানসার কেন হয়, এর লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
মূত্রথলির ক্যানসার কী এবং কেন হয়? বিশেষজ্ঞদের মতে, মূত্রথলির অভ্যন্তরে থাকা ইউরোথেলিয়াম নামের পাতলা আস্তরণে অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধির ফলে মূত্রথলির ক্যানসার হয়। এই টিউমার ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে।
মূত্রথলির ক্যানসারের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
ধূমপান: ধূমপান মূত্রথলির ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ। তামাকজাত দ্রব্য সেবনকারীদের এ রোগের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেশি।
রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ: ডাই কারখানা, রাবার, চামড়া, প্লাস্টিক ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের কারখানায় দীর্ঘদিন কাজ করা মানুষের মূত্রথলির ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।
দীর্ঘমেয়াদি মূত্রনালির সংক্রমণ: যাদের ঘন ঘন বা দীর্ঘদিন মূত্রনালিতে সংক্রমণ হয়, তাদেরও ঝুঁকি থাকে।
ক্যাথেটারের ব্যবহার: প্রস্রাবে জটিলতা থাকায় যারা দীর্ঘদিন ক্যাথেটার ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রেও এ রোগ হতে পারে।
পরজীবী সংক্রমণ (সিস্টোসোমায়োসিস): আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য বা মিশরে সিস্টোসোমায়োসিস নামের এক ধরনের পরজীবী সংক্রমণের কারণে মূত্রথলির ক্যানসার হতে পারে।
জেনেটিক কারণ: পরিবারে কারো মূত্রথলির ক্যানসার থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। ‘পি-ফিফটি থ্রী’ জিনের মিউটেশনও ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত।
মূত্রথলির ক্যানসারের ধরন মূত্রথলির ক্যানসার মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে—
সুপারফিসিয়াল টিউমার (নন-মাসল ইনভেসিভ ব্লাডার ম্যালিগনেন্সি): টিউমার মূত্রথলির ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকে, মাংসপেশীতে ছড়ায় না।
মাসল ইনভেসিভ ব্লাডার ম্যালিগনেন্সি: টিউমার মূত্রথলির মাংসপেশীতে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া ট্রানজিশনাল সেল কার্সিনোমা, স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা, অ্যাডেনোকার্সিনোমা প্রভৃতি উপশ্রেণিও রয়েছে।
মূত্রথলির ক্যানসারের লক্ষণ মূত্রথলির ক্যানসারের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো—
চিকিৎসা কীভাবে হয়? ক্যানসার কোন স্তরে আছে, টিউমারের ধরন ও কতদূর ছড়িয়েছে, তার ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। রোগ নির্ণয়ের জন্য বায়োপসি ও অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে যদি টিউমার ছোট হয়, তাহলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মূত্রথলির টিউমার অপসারণ করা হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশন অফ ব্লাডার টিউমার।
টিউমারের পুনরাবৃত্তি রোধে মূত্রথলির ভেতর ওষুধ (ইনজেকশন) দেওয়া হয়। কখনো কখনো কেমোথেরাপি বা বিসিজি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ইমিউনোথেরাপিও দেওয়া হয়।
যদি টিউমার মূত্রথলির মাংসপেশীতে ছড়িয়ে যায়, তখন পুরো মূত্রথলি অস্ত্রোপচারে অপসারণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রস্রাব বের করার বিকল্প রাস্তা তৈরি করতে হয়।
প্রতিরোধে কী করবেন? মূত্রথলির ক্যানসার প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল—
মূত্রথলির ক্যানসার শুরুতে ধরা পড়লে চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়। তাই যে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন