
		মধ্য আমেরিকার ছোট দেশ এল সালভাদর, একসময় যেটি কুখ্যাত ছিল গ্যাং-সহিংসতা আর খুনোখুনির জন্য। সেই দেশেই এখন গড়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর কারাগার—“সেন্টার ফর দ্য কনফাইনমেন্ট অব টেরোরিজম” বা সংক্ষেপে সিকট। এখানে বন্দিদের দিন কাটে কঠিন নিয়মে। প্রতিদিন মাত্র আধা ঘণ্টা সেলের বাইরে থাকার সুযোগ মেলে। সেলে আছে উন্মুক্ত টয়লেট, খাবার খেতে হয় হাত দিয়ে—কোনো চামচ পর্যন্ত দেওয়া হয় না। ২৪ ঘণ্টাই জ্বলে বাতি। আর এ সবই করা হয় বন্দিদের মনোবল ভেঙে ফেলার জন্য।
সিকট কারাগারটি তৈরি হয়েছে শহর থেকে অনেক দূরে, জনমানবশূন্য অঞ্চলে। প্রায় ৪১০ একর জায়গাজুড়ে বিশাল এই কারাগার ঘিরে আছে তিন স্তরের নিরাপত্তা দেয়াল। ভেতরে ঢুকতে হলে লাগে বিশেষ অনুমতি। কারাগারে একসঙ্গে ৪০ হাজার পর্যন্ত বন্দি রাখা যায়। এখানে কোনো দর্শনার্থী ঢুকতে পারে না, আদালতের বিচারও হয় ভিডিও কলে। এমনকি কারাগারের আশপাশে মোবাইল সিগন্যালও পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে এই কারাগার তৈরি করেন মূলত ভয়ঙ্কর গ্যাং অপরাধীদের আটকে রাখার জন্য। কিন্তু এই কারাগারের গল্প শুধু অপরাধ দমনের নয়; এর মধ্যে আছে মানবাধিকার আর রাষ্ট্রীয় কঠোরতার টানাপোড়েনও।
মূলত এমএস-১৩ এবং বারিও-১৮ নামের ভয়ঙ্কর গ্যাং সদস্যদের ঠাঁই হয়েছে এই জেলে। বুকেলে ২০২২ সালে আইন করে পুলিশ আর সেনাবাহিনীকে গ্যাং-সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেন। ফলাফল—৮০ হাজারের বেশি মানুষ ধরা পড়ে রাতারাতি। অনেকের বিরুদ্ধে এখনো মামলা হয়নি, তবু তারা সিকটে বন্দি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এভাবে মানুষকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা আইনবহির্ভূত এবং অমানবিক। কিন্তু এল সালভাদরের অনেক মানুষই বুকেলের পক্ষে। তাদের কাছে দেশের নিরাপত্তাই বড়। কারণ সিকট চালুর পর থেকে দেশে খুন-সহিংসতা কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
এখন প্রশ্ন হলো—নিরাপত্তার জন্য কি মানুষ স্বাধীনতা বিসর্জন দেবে? নাকি মানবাধিকারের কথা ভেবে ন্যায়বিচারের পথে হাঁটবে? সিকট হয়তো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে আমাদের অনুপ্রাণিত করছে, মনে করিয়ে দিচ্ছে, নিরাপত্তা আর স্বাধীনতার যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি।
মন্তব্য করুন