
		আপনি কি কখনো ইয়ারওয়ার্মসের শিকার হয়েছেন? কিংবা যে কোন একটা সুর একটা লাইন কিছু শব্দ যেটা বারবার আপনার মাথার ভেতর বাজতেই থাকে। খেতে গিয়েও সেটা বাজে, পড়তে গিয়েও বাজে,ঘুমোতে গেলেও সেটা পিছু ছাড়ে না। আপনি ভাবছেন ‘আরে! এটা কি আমার মাথা খাচ্ছে? আপনার কি কখনো এমনটা হয়েছে যে কোনো একটি গানের সুর বা কথা আপনার মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে? আপনি চেষ্টা করছেন থামাতে, কিন্তু পারছেন না? যেন আপনার মস্তিষ্ক সেই গানটার সাথে আঠার মতো লেগে গেছে? যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে আপনি ইয়ারওয়ার্মসের শিকার হয়েছেন!
শব্দের উৎস ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় যা জানা যায় : Earworm-শব্দটা এসেছে জার্মান ‘Ohrwurm’ থেকে যার অর্থ ‘কানে ঢুকে যাওয়া পোকা’। আসলে এটা একটা মানসিক ঘটনা, যাকে বিজ্ঞানে বলা হয়:Involuntary Musical Imagery (INMI)অর্থাৎ এমন একটা সুর যা আপনি ইচ্ছা না করেও মাথায় ঘোরাতে থাকেন। এটা কোনো রোগ নয়, বরং একদম স্বাভাবিক ও সাধারণ ঘটনা।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০শতাংশ মানুষকে সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও জ্বালাতন করে। মানুষ কখনো না কখনো Earworm অনুভব করে।জেমস কেলারিসের গবেষণা অনুসারে, ৯৮% ব্যক্তির সাথে এটি ঘটে থাকে। কেন গান আটকে যায়? কেন কিছু গান এভাবে মাথায় আটকে যায়? এর পেছনে আছে কিছু চমৎকার বৈজ্ঞানিক কারণ। যেমন এক: Repetition- গানে যদি কোনো অংশ বারবার আসে, সেটা সহজেই মস্তিষ্কে ঘাঁটি গাঁড়ে।
দুই: Catchiness-সুরটা যদি সোজা, তালযুক্ত ও কিছুটা ভিন্নধর্মী হয়। তবে সেটা আরও বেশি চিপকে থাকে।
তিন: অপূর্ণতা- যদি কেউ হঠাৎ করে গান থামিয়ে দেয়, আপনার মস্তিষ্ক নিজে থেকে বাকি অংশ গাইতে শুরু করে। Earworm সবচেয়ে বেশি হয় যে গানগুলো আমরা অনেক শুনি, বা যেগুলোর সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়ানো থাকে। একটা পুরনো প্রেমের গান…একটা শিশুতোষ রাইম…এমনকি একটা বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল-‘চট করে মাথায় ঢুকে যায়, আর বের হয় না’। এগুলো শুধু সুর নয়, মস্তিষ্কের স্মৃতি ও আবেগের শাখায় বসে পড়ে। তাই হঠাৎ হুট করে এমন কোনো গানের লাইন মনে পড়ে যায়…যেটা আপনি ১০ বছরেও শোনননি!
তাহলে কি আমরা Earworm থেকে মুক্তি পেতে পাবোনা? কিছু গবেষণায় দেখা গেছে একে সরাতে হলে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে অন্য কিছু করা ভালো। যেমন Sudoku, শব্দপাজল, বা কঠিন পড়াশোনা। আবার অনেকে বলেন, chewing gum খেলে গান খুব কম বাজে মনে, কারণ মুখ ও শ্রবণপ্রক্রিয়ার মধ্যে যোগাযোগ আছে। কেউ কেউ বলেন Earworm দূর করতে চাইলে সেই গানটাই আবার শুনে নাও! এতে করে মস্তিষ্ক যেন ‘মিশন সম্পন্ন’ ভাবে এবং গান থেমে যায় ।
Earworms শুধুই বিরক্তিকর নয়, মাঝে মাঝে এগুলো সৃষ্টিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।মিউজিশিয়ান, লেখক বা শিল্পীরা বলেন-যখন কোনো গান বা শব্দ মাথায় ঘোরে, সেটি অনেক সময় নতুন আইডিয়ার জন্ম দেয়। আর কিছু গবেষক তো Earworm কে বলেন ‘cognitive itch’-মানে, এমন একটা মানসিক চুলকানি, যেটা মস্তিষ্ক নিজেই চুলকে প্রশান্তি পায়!
এ এক মজার ব্যাপার-আপনি গান শুনছেন না, তবু আপনার মাথা নিজে থেকে বাজিয়ে চলেছে। তাই যখন পরেরবার কোনো সুর মাথায় ঘোরে…চিন্তা করবেন না। আপনার মাথা ঠিকই আছে। এটা Earworm-একটা সুর, যা আপনার মস্তিষ্কে নিজের ঘর বানিয়ে নিয়েছে। আর হ্যাঁ… এখন আপনি হয়তো ভাবছেন-এই কথার মাঝেই মাথায় বাজতে শুরু করেছে আরেকটা গান! (থামুন)এটাই Earworm এর জাদু।” যাইহোক তাহলে আপনার মাথায় এখন কোন গানটি ঘুরছে হুম?
মন্তব্য করুন