মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

চল্লিশের পরও থাকুন রূপে অতুলনীয়া

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম

কুড়িতে বুড়ি কিংবা চল্লিশে চালশে— তথাকথিত এই ভাবনাগুলো এখন পুরনো। একালের নারীরা বয়সটাকে হাতের মুঠোয় বন্দি করে এগিয়ে চলেছেন সর্বত্র। তবে চল্লিশ বছরের পর কমবেশি সবারই শারীরিক ও মানসিকভাবে একটা পরিবর্তন আসে। ভাবনা-চিন্তা থেকে শুরু করে জীবনবোধের এই পরিবর্তন চলার পথকে চেনায় নতুন করে।

চল্লিশের পর চোখের নিচে বলিরেখা দেখা দেয়া, ত্বকের অনুজ্জ্বল ভাব আরও স্পষ্ট হতে শুরু করে। হাত ও পায়ের দিকে তাকালেই বোধগম্য হয়, বয়সটা দিন দিন বাড়ছে। তবে জেনে রাখুন, বয়স যতই হোক, বাঁচাটা সুন্দর হওয়া চাই। প্রতিদিন আয়নায় নিজেকে দেখে যেন বাঁচার ইচ্ছাটা একটু করে বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাই যত ব্যস্তই থাকুন না কেন, দিনের একটু সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখুন, নিজের যত্ন নিন।

খাদ্যতালিকায় শরীর ও ত্বকের উপযোগী খাবারকে প্রাধান্য দিন। দিনে অন্তত এক ঘণ্টা সময় বের করুন ত্বকের যত্ন নিতে। তবেই ত্বক হাসবে নতুন করে।

ত্বকে বয়সের ছাপ ঠেকাতে

জীবনে নানান ঝামেলা থাকবেই তবে অতিরিক্ত টেনশন নেয়া যাবে না। পজিটিভ থাকতে হবে। এছাড়া ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর কিছু অভ্যাস মেনে এবং শরীর ত্বকের সঠিক যত্ন নিলে ত্বকের বয়সের ছাপ পড়া ঠেকাতে পারবেন চল্লিশের পরও।

১. সূর্য থেকে বাঁচাতে হবে: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে তরুণ বয়সেই ত্বকে বয়সের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। চিকিৎসদের ভাষায় একে বলা হয় ‘হাইপারপিগমেন্টেশন’, যে কারণে ত্বকে দাগ হয়, কুঁচকে যায়। সূর্যের এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে সববয়সের মানুষের উচিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, যার সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর (এসপিএফ)-এর মাত্রা হতে হবে ৩০ বা তার বেশি।

২. ভিটামিন ই ও সি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন ই ও সি সরবরাহ করে ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ যা মুক্তমৌলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।

৩. মানসিক চাপ সামলাতে: আপনার মানসিক চাপের ফলাফল সরাসরি ত্বকে আর চুলে চোখে পড়বে। তাই মন মেজাজ শান্ত রাখতে হবে। অযথা দুশ্চিন্তা মাথায় নেওয়া যাবে না। যোগ ব্যায়াম ও ধ্যানের অভ্যাস মানসিক চাপ কমায়।

৪. ময়েশ্চারাইজ: ত্বক পরিষ্কারের পর পরই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে। এই ময়েশ্চারাইজারে থাকতে হবে গ্লিসারিন, খনিজ তেল, ‘হায়ালুরনিজ অ্যাসিড’ ইত্যাদি। সেই সঙ্গে ভেতর থেকেও ত্বকে আর্দ্রতা যোগানো জরুরি।

৫. প্রচুর পানি পান: সবচাইতে কার্যকর উপায় হল প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করা। পানিশূন্যতা ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টি করতে পারে অল্প বয়সেই।

খাদ্যতালিকায় নজর দিন

ত্বক স্বাস্থ্য়োজ্জ্বল রাখতে কোলাজেন খুব জরুরি। যেসব খাবার কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, সেগুলো খাদ্যতালিকায় রাখার চেষ্টা করুন। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ও নমনীয়তা ধরে রাখে এমন ভিটামিনগুলো পেতে হলে খাদ্যাভ্যাসে থাকতে হবে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, বীজজাতীয় খাবার, উদ্ভিজ্জ তেল, পত্রল শাকসবজি, ‘সিট্রাস’ বা টক-ফল, লেবু ইত্যাদি।

খাদ্যতালিকায় রাখুন বিভিন্ন রকমের বাদাম। এতে প্রচুর ভিটামিন ই, সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ভিটামিন-ই ভিটামিন সি-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোলাজেন তৈরি করে। তাই ৩০ বছর বয়সের পর নিয়মিত পাঁচ-ছয়টি করে কাঠবাদাম খাদ্যতালিকায় রাখুন।

আখরোট: আখরোটে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে, টক্সিনের ছাপ পড়তে দেয় না ত্বকে।

গাঢ় সবুজ শাকসবজি: গাঢ় সবুজ শাকসবজিতে আছে প্রচুর খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন এ, সি, ই। এগুলো কোলাজেন তৈরির জন্য দরকারি। খাদ্যতালিকায় পালংশাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শালগম ও শিম রাখুন।

সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক মাছে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি ভিটামিন ডি-এর সঙ্গে মিলে ত্বক কোমল ও হাড় মজবুত রাখে। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়া দরকার।

রসুন ও কাঁচা হলুদ: রসুন উচ্চ সালফারযুক্ত মসলা। এটি কোলাজেন ভেঙে যাওয়া রোধ করে। হলুদকে বলা হয় পাওয়ার হাউস বা শক্তি ঘর। প্রতিদিন সকালে দু-একটি কোয়া কাঁচা রসুন ও খালি পেটে পানির সঙ্গে মিশিয়ে হলুদ খেলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে, ত্বকও মসৃণ থাকে।

লেবু: ত্বকের বলিরেখা ও ক্ষত দূর করতে লেবুর জুড়ি নেই। রোজ সকালে চিনি ছাড়া এক গ্লাস লেবুর রস খেলে ত্বক সজীব থাকে। খেতে হবে গাজর, টমেটো।

বিটরুট: বিটরুটে ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও সুপার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো মৃত কোষ দূর করে ত্বক পরিষ্কার রাখে, ত্বকের পোর বা বড় হয়ে যাওয়া ছিদ্র মেরামত করে। প্রতিদিন ৫০০ মিলিলিটার বিটরুটের জুস পান করলে কিংবা সালাদ হিসেবে বিটরুট খেলে ত্বক ভালো থাকে।

চায়ের ক্ষেত্রে: দুধ চা আর নয় কিংবা লিকার বা লাল চাও নয়। প্রয়োজন এখন গ্রিন টি। সুস্থ থাকতে গ্রিন টি খাওয়া ভালো। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই নিয়মিত গ্রিন টি খেলে কার্ডিও ভাসকুলার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। হার্ট অ্যাটাক, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

প্রসাধনী ব্যবহারে মনে রাখুন

ত্বকের জন্য ভালো মানের প্রসাধনী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় মনে রাখতে হবে—

  • ভিটামিন সি যুক্ত প্রসাধনী কিনুন। কারণ, ভিটামিন সি ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড এক্সফোলিয়েটর মৃত কোষ সরিয়ে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।
  • রোদে যেন ত্বকে সানট্যান না পড়ে, সে জন্য ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। একবার ত্বক বুড়িয়ে গেলে তা ঠিক করে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য শুরু থেকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • পাউডার-বেসড ফাউন্ডেশন ব্যবহার বন্ধ করুন। ঝলমলে ত্বকের জন্য লাইট টু মিডিয়াম কভারেজ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।

এসবের বাইরে শরীর ও ত্বককে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। তাই রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। এতে আপনার ত্বকের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে।

চল্লিশ মানে আর নয় কোনো দ্বিধা, নয় কোনো ভ্রান্তি। শারীরিক-মানসিক নতুন নতুন চ্যালেঞ্জকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার নামই চল্লিশ। নিয়মিত সুষম খাবার খান, ব্যায়াম করুন, ত্বকের যত্ন নিন আর চমকে দিন সমাজ-সংসার-কর্মক্ষেত্রের সবাইকে। কারণ, আপনি অনন্যা, আপনি আধুনিকা এবং সেই আপনিই রূপবতী, অতুলনীয়া।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিকেলের নাস্তায় মজাদার পালংশাকের লুচি
বিকেলের নাস্তায় মজাদার পালংশাকের লুচি
যেভাবে আয়নার দাগ দূর করবেন
যেভাবে আয়নার দাগ দূর করবেন
গলা ব্যথায় এড়িয়ে যাবেন যেসব খাবার
গলা ব্যথায় এড়িয়ে যাবেন যেসব খাবার
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা