
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।কাতারের দেওয়া রয়্যাল অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে অথবা শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশে তাকে নেওয়া হতে পারে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ ১৬ জন বেগম জিয়ার সঙ্গে যাবেন বলে জানা যায়। বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ।
সফরসঙ্গীদের তালিকা-
এদিকে সবকিছু ঠিক থাকলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পরে অথবা আগামীকাল শুক্রবার ভোরে লন্ডনে নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার আগে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সাংবাদিকদের খালেদা জিয়ার চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ কথা জানান। খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহযোগিতা করবে কাতার। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কাতারের পক্ষ থেকে আজ সকালে বিএনপিকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এবং খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে তাঁকে কাতার রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের একটি নির্ধারিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ মধ্যরাতের পরে অথবা আগামীকাল ভোরে তাঁকে লন্ডনে নেওয়া হবে।
বিদেশযাত্রার সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে দেশের বাইরের দুজন চিকিৎসক ও অ্যারোনটিক্যাল ফিজিশিয়ানরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকবেন বলে জানান জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বিমানে যাতে যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁকে সুস্থভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কিছু চিন্তা করা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে আজ তিনবার ভার্চ্যুয়ালি মিটিং করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও চীনের চিকিৎসকেরা সশরীর দেখেছেন। তাঁদের সবার সঙ্গে সর্বশেষ আলোচনা হয়েছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ মেহেরবানিতে আমরা অনেক অনেক আশাবাদী। ...আল্লাহর অশেষ রহমতে উনি (খালেদা জিয়া) আবার আমাদের মাঝে ফেরত আসবেন।
১২ দিন ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁকে নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বেগে রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটা কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে হৃদ্যন্ত্রে জটিলতা রয়েছে। বাকি সমস্যাগুলো অনেকটাই অপরিবর্তিত।
গতকাল রাতে চীন থেকে দেশটির চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় আসেন। রাতেই তাঁরা খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডে যোগ দেন। এর আগে দুপুরে যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় আসেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বেলে। তিনি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। খালেদা জিয়াকে দেখেন। এই চিকিৎসকেরা গতকালই খালেদা জিয়ার সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো দেখেছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারি মাসে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে, পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন