বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

নেত্রকোণায় নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশাবিষয়ক মতবিনিময় সভা

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০৩ পিএম

‘নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশা' বিষয়ক মতবিনিময় সভা নেত্রকোণার পাবলিক হলে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেরা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজনে ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন নেত্রকোণার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল আজম। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।

এ সময় তিনি বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অবস্থিত স্কুলগুলোতে বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে ঐ জনগোষ্ঠী থেকে একজন করে আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দেয়া গেলে তাঁদের ভাষা যেমন সংরক্ষণ হবে তেমনি মাতৃভাষায় তাঁদের প্রাথমিক শিক্ষাও নিশ্চিত হবে। এছাড়াও দেশের যেসব এলাকায় কালচারাল একাডেমি হয়েছে, সেগুলো শুধু কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে কাজ করতে পারে, গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণে এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।

সভায় ‘নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশা’ বিষয়ক মুল আলোচনা পত্র উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একেএম মাজহারুল ইসলাম। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন এশিয়া সাউথ প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর বেসিক এন্ড অ্যাডাল্ট এডুকেশন এর ক্যাপাসিটি সাপোর্ট অ্যাডভাইজার কেএম এনামুল হক।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা বিনতে রফিক, নেত্রকোণা রাজুর বাজার কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, লেখক ও গবেষক আলী আহমেদ খান আইয়ুব, সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার পাল, গণসাক্ষরতা অভিযান ঢাকার প্রোগ্রাম অফিসার সিজুল ইসলাম, নেত্রকোণা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সরোজ মোস্তফা, জাগরণ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কেএমএ জ্যামী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেরা’র নির্বাহী পরিচালক এসএম মজিবুর রহমান। সেরা’র পরিচালক (প্রোগ্রাম) আলী উসমান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট) এর সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার।

সভায় নেত্রকোণার সদর, দূর্গাপুর, কমলাকান্দা ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট গারো, হাজং সম্প্রদায়সহ নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, উন্নয়নকর্মী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং গণমাধ্যমের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা অর্জনে চ্যালেঞ্জ, সীমাবদ্ধতা এবং করণীয় নিয়ে তাঁদের মতামত এবং সুপারিশ তুলে ধরেন।

আলোচকরা বলেন, নৃগোষ্ঠীর মানুষজন দূর্গম এলাকাগুলোতে বসবাস করেন। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, দারিদ্রতা ও কর্মের জন্য রাজধানী বা অন্যত্র যেসব অভিভাবকরা চলে যান তাঁদের শিশু সন্তানরা অবহেলিত হচ্ছে, রাস্তাঘাটে এখনও ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটছে এমনকি ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে। এছাড়াও বর্ডারে মাদকদ্রব্য ও মানব পাচারসহ চোরাচালানের সাথেও শিশুরা যুক্ত হচ্ছে। বালু ও পাথর উত্তোলনের সাথেও শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ছেন নৃগোষ্ঠীর শিশুরা। নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের লোকজন মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে শিক্ষা প্রদানে স্কুল, কমিউনিটি এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ জিও-এনজিওর সমন্বয় বৃদ্ধি করে কাজ করার সুপারিশ জানানো হয়।

এছাড়াও ট্রাইবাল এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ‘আদিবাসী’ হিসেবে নিজেদের স্বীকৃতির দাবিও জানান।এছাড়াও অংশীজনরা শিক্ষায় তাঁদের মাতৃভাষার ব্যবহার বজায় রাখা ও প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা ভিত্তিক শিক্ষা চালু করা, স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর শিক্ষকদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া, যাতে সাংস্কৃতিক সংযোগ বজায় থাকে, পাঠ্যসূচিতে তাঁদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আরো বিস্তৃতভাবে অর্ন্তভুক্ত করা, প্রত্যন্ত এলাকায় নতুন বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়ন করা, মেয়ে শিশুদের শিক্ষায় বিশেষ সুরক্ষা ও প্রণোদনা প্রদান করা, শিক্ষা সামগ্রী ও বই নৃগোষ্ঠীদের ভাষায় অনুদিত করে সহজবোধ্য করা, স্কুলে জাতিগত বৈষম্য ও অপমানের ঘটনা প্রতিরোধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া, স্কুলে পুষ্টিকর খাবার অর্থ্যাৎ মিড-ডে মিল নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় গুরুত্ব বাড়ানো, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও অর্থনৈতিক সহায়তা বাড়ানো, যুব উন্নয়ন সহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দক্ষতা ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণে তাঁদের বেশি বেশি যুক্ত করা, জাতীয় বাজেটে তাঁদের শিক্ষার জন্য বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দিবসের মাধ্যমে আত্মপরিচয় জাগ্রত করা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে আন্ত:সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া অন্তর্ভুক্ত করা, স্কুল ত্যাগ বা ঝরে পড়া রোধে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ ও যাতায়াতের সুবিধার আওতায় আনা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্য ও কাউন্সেলিং সেবা চালু করা, স্থানীয় সমাজ, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি ও বিদ্যালয়ের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা, শিক্ষানীতি প্রণয়নে আদিবাসী প্রতিনিধি ও সংগঠনের মতামত অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষা ব্যবস্থায় সমতা, মর্যাদা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ সর্বপরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৪) অর্জনে সবার জন্য ন্যায়ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করার জোর সুপারিশ করা হয়। সবশেষে অংশীজনরা প্রত্যাশা করেন, শিক্ষার মাধ্যমে নৃগোষ্ঠীর শিশুরা হোক সচেতন, আত্মনির্ভর ও গর্বিত নাগরিক।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিএনপির প্রার্থী সরওয়ার আলমগীরকে বরণ করলেন ফটিকছড়িবাসী
বিএনপির প্রার্থী সরওয়ার আলমগীরকে বরণ করলেন ফটিকছড়িবাসী
স্বাস্থ্যসেবায় ইংল্যান্ডের মডেলকে সামনে রেখে কাজ করছে বিএনপি: ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার
স্বাস্থ্যসেবায় ইংল্যান্ডের মডেলকে সামনে রেখে কাজ করছে বিএনপি: ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার
পঞ্চগড়ে ৭ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার-বীজ বিতরণ
পঞ্চগড়ে ৭ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার-বীজ বিতরণ
গাজীপুরে বিপুল পরিমাণ ঘোড়ার মাংস জব্দ
গাজীপুরে বিপুল পরিমাণ ঘোড়ার মাংস জব্দ