
ছয়টি আরব দেশের জোট উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ- জিসিসি (GCC) একক ও অভিন্ন পর্যটন ভিসা আগামী বছর এই ভিসা চালু হবে। সৌদি আরবের পর্যটনমন্ত্রী আহমেদ আল-খাতিব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দীর্ঘ পরিকল্পনার পর বহুল প্রতীক্ষিত এই ভিসার নাম দেওয়া হয়েছে ‘জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা’। এ ভিসার মাধ্যমে পর্যটকরা একবার আবেদন করেই সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত ও ওমান একসাথে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ভ্রমণকারীরা চাইলে একক দেশ বা সমস্ত ছয়টি দেশে প্রবেশের সুবিধা নিতে পারবেন। এতে খরচও পৃথক ভিসার তুলনায় কম হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ভিসার মেয়াদ হবে এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে এটি শুধুমাত্র পর্যটন ও পারিবারিক ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য থাকবে।
সৌদি আরব পর্যটনমন্ত্রী জানান, চার বছর ধরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার পর এই উদ্যোগটি অবশেষে মাইলফলকে পৌঁছেছে।
তিনি উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের দেশগুলোর মাঝে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতকে সংযুক্ত করার অন্যতম বৃহৎ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছে এই একক ভিসা প্রকল্পকে।
আল-খাতিব আরও বলেন, গত বছর গালফের চারটি প্রধান এয়ারলাইন্স প্রায় ১.৫ কোটি যাত্রী পরিবহন করেছে, যার মধ্যে মাত্র ৭০ মিলিয়ন যাত্রীই উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ভ্রমণ করেছেন। এই ব্যবধানই দেখাচ্ছে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের বিশাল সম্ভাবনা।
বাহরাইনের রাজধানী মানামায় গালফ গেটওয়ে ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় সৌদির পর্যটনমন্ত্রী আল-খাতিব বলেছেন, উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) এখন পর্যটন খাতে এক ঐতিহাসিক সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আঞ্চলিক সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, আধুনিক অবকাঠামো ও নিরাপদ পরিবেশের কারণে এ অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ওমানে অনুষ্ঠিত জিসিসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শেনজেন ভিসার আদলে তৈরি যৌথ মডেল হিসেবে জিসিসি একক ভিসার পরিকল্পনা করা হয়।
জিসিসি কর্মকর্তারা বলেছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য পরিকল্পনার একটি মূল অংশ হবে এই ভিসা; যা এমন আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে যারা একাধিক দেশে সহজে ভ্রমণ করতে চান, কিন্তু পুনরায় কাগজপত্র, আলাদা ফি ও ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে পড়তে চান না। প্রাথমিকভাবে এই ভিসা কেবল পর্যটন ও পারিবারিক ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং আবেদন অনলাইনে করা যাবে।
ভিসা চালুর পর আবেদনকারীদের কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদী পাসপোর্ট, আবাসনের তথ্য, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ভ্রমণ বিমা ও আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং ফেরার বা পরবর্তী গন্তব্যের টিকিট জমা দিতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়াও সহজ হবে বলে জানিয়েছেন জিসিসি কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, সরকারি অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে নথি আপলোড, ফি পরিশোধ এবং ই-মেইলে ডিজিটাল ভিসা গ্রহণ করা যাবে।
উপসাগরীয় কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, জিসিসি একক ভিসা চালু হলে পর্যটকদের অবস্থানকাল বাড়বে, একাধিক শহরে ভ্রমণ বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যয়ও ছড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন দেশে। এই বিষয়ে আগামী কয়েক মাসে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ এবং আগামী বছর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে আবেদন পোর্টাল চালু করা হবে।
মন্তব্য করুন